বাড়িতে হয়েছিল দুর্গাপুজো। উৎসবের শেষে প্রতিমা নিরঞ্জনের তোড়জোড়ের সময় ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পরিবারের একমাত্র সন্তান খেলতে খেলতে বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ই-রিকশায় উঠে পড়েছিল। আচমকাই গড়াতে শুরু করে ই-রিকশাটি। রিকশাটি চালকহীন থাকার কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচিলে সাথে ধাক্কা মারে। তার ফলে রিকশার সামনের উইন্ডস্ক্রিনের কাচ ভেঙে বালকটির গলায় ঢুকে যায়। বিজয় দশমীর দিনে ই-রিকশার উইন্ডস্ক্রিনের কাচের আঘাতে মৃত্যু হল পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তানের।
বিজয় দশমীর দিন নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার রাজারহাটের নৈপুর গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাইয় স্তম্ভিত সকলে। মৃত বালকের নাম অজিতেশ পোদ্দার, বছর সাতের ওই বালক পরিবারের একমাত্র সন্তান। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, ই-রিকশাটির কাচের আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভিআইপি রোডের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকেরা ওই বালককে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজারহাট এলাকায় অজিতেশের বাবা অমিত পোদ্দারের ছোট-খাট ব্যবসা আছে। রাজারহাটের নৈপুকুর গ্রাম এলাকায় পোদ্দার বাড়ির পুজোর বেশ পরিচিতি রয়েছে। এ বছর ৫৯তম পুজো ছিল ঐ বাড়িতে।
পরিবার সুত্রে জানাগিয়েছে, পুরোহিতেরা তাঁদের সব জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্যই ওই ই-রিকশাটি ডেকেছিলেন। রিকশাটি বাড়ির চত্বরে দাঁড় করানো ছিল। অজিতেশ খেলতে খেলতে রিকশাটিতে চড়ে বসেছিল। সেই সময়ে আচমকা ঐ রিকশাটি গড়াতে শুরু করে দেয়। এর পর কয়েক হাতের মধ্যে থাকা পাঁচিলে গিয়ে ধাক্কা মারে চালকহীন রিকশাটি। ফলে রিকশার উইন্ডস্ক্রিনের সামনের কাচ ভেঙে কাচের টুকরো বালকের গলায় ঢুকে যায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অজিতেশের বাবা অমিত। অজিতেশের জ্যাঠামশাই সুশান্ত জানিয়েছেন, এ দিন সকালে বিসর্জনের আগে পরিবারে টাকাযাত্রা নামে একটি অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানের জন্য সুন্দর পোশাকে সেজেছিল পরিবারের বাচ্চারা। টাকাযাত্রা অনুষ্ঠানের পরে বিসর্জনের আয়োজন শুরুর আগে পরিবারের সবাই যে যার ঘরে গিয়েছিলেন জলখাবার খাওয়ার জন্য। তারই মধ্যে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
অজিতেশের জ্যাঠামশাই সুশান্ত আরও জানিয়েছে , “মন্দিরের সামনেই দাঁড় করানো ছিল রিকশাটি। আমি দূর থেকে সব দেখেছি, অজিতেশ রিকশাটিতে উঠে বসেছে। ওকে নামানোর জন্য সাথে সাথে ছুটি। কিন্তু তারই মধ্যে দেখি রিকশাটি গড়াতে শুরু করেছে। রিকশাটি একটু খানি দূরত্ব গড়িয়েছিল। আর পাচিলের সাথে খুব জোরেও ধাক্কা মারেনি। এরপর কিন্তু আমি দেখি, অজিতেশের গা বেয়ে রক্ত পরছে। ও রিকশাচালকের স্থানে স্থির ভাবে বসে আছে। ওর কাছে যেতেই দেখি, রিকশার কাচে গলার নলি কেটে রক্ত বেরোচ্ছে।”
ওই অবস্থায় অজিতেশেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন। তিনি বলেছেন, “রিকশা দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। রিকশাটিতে চাবি দেওয়া ছিল কি না? সেটি আচমকা কী ভাবে গড়াতে শুরু করল, সে সব বিষয়ের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিবারের পাশে আছি।”