রাশিয়ার ‘গোয়েন্দা’ তিমির মৃত্যু ঘিরে রহস্য! নরওয়ের বিশেষ বিবরণী

kmc 20241006 214139 rqVz2YQ957

বহু যুগ ধরে গোয়েন্দা বৃত্তির অভিযোগ উঠেছে মানুষের বিপক্ষে। দোষারোপ যদি ওঠে শান্ত এক প্রাণীকে নিয়ে। একটি শ্বেত রঙের বেলুগা তিমি।
গভীর সমুদ্রের এই প্রাণী শিরোনামে এসেছিল কারণ এটা নাকি সাধারণ কোনো তিমি নয়। বলা হয় এটা রাশিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী। নরওয়ে ‘হল’ এবং রাশিয়ার ‘ভ্লাদিমির” এই দুটি শব্দ যুক্ত করে বেলুগা তিমিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হলদিমির’।

আগস্ট মাসের শেষে এই খ্যাত বেলুগা তিমির দেহ খুঁজে পেয়েছে নরয়ের সমুদ্রে। আর তার মৃত্যুকে ঘিরে আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল নানা রকম রহস্য। মৃত মাছের দেহ উদ্ধারের পর মারা যাওয়ার কারণ নিয়ে অনেক আলোচনা শুরু হয়। কারণ তিমি মাছের মৃত দেহটি পাওয়ার সময় তার দেহে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে কোলাহল ওঠে বিভিন্ন জায়গায়।

তবে সব কথাবার্তাকে স্বীকর না করে নরয়ের পুলিশ ঘোষনা করে গোয়েন্দার গুলি নয়, সংক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে ‘হলদিমির’। ব্যাকটেরিয়ার জন্য হতে পারে মুখের ক্ষত। দাঁতে বা মুখে আটকে থাকা ছোট কাঠের টুকরো আটকে যাওয়া থেকেই ক্ষত তৈরি হয়েছিল বেলুগা তিমিটির এমন কথা জানিয়েছে নরওয়ের প্রশাসনিক। এর আগে প্রাণী সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠা এনওওএইচ এবং ওয়ান হোয়েল দাবি করেছে এবং পুলিশ নালিশ করেছে। এই দোষারোপে ভিত্তিতে তদন্তে নামে নরওয়ের পুলিশ প্রশাসনিক। নরওয়ের মৎস্য দপ্তরের তরফ থেকে স্যান্ডনেসের পশু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান একটি পোস্টমটাম করে। সেখানে তিমির মাছটির মুখে ৩৫ সেন্টিমিটার এর একটি কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে বলে পোস্টমর্টেমের বলা হয়েছে।

নরয়ের পুলিশ প্রশাসনিকের প্রধান আমুন্ড প্রিডে রেভেইম বলেছেন যে, মারা যাওয়ার কারণ হলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা কিনা ওই কাঠের টুকরোটির জন্য মুখের ভেতর ক্ষতের সৃষ্টির জন্য হয়েছে। তিমির শরীরে কোনও ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে পোস্টমর্টেমে উল্লেখ করা হয়েছে। বুক এবং মাথার এক্সরে করে শরীরে কোনরকম ধাতুর আঘাত লক্ষ্য করা যায়নি। পুলিশও শরীরে কোন গুলির চিহ্ন খুঁজে পায়নি, তাই আর কোন তদন্ত করা হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে। নরওয়ের সুদূর উত্তর উপকূলে ফিনমার্ক অঞ্চলে তিমি হলদিমিরকে সর্বপ্রথম দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। তিমি মাছটি লম্বায় ছিল ১৪ ফুট। ওজন ছিল প্রায় ১২০০ কেজি। বেলুগা তিমিদের সম্ভবত সুমেরু অঞ্চলের দূর সমুদ্রে দেখা যায়। বেলুগা নির্জন জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।

কিন্তু আচরণের দিক থেকে হলদিমির ছিল স্বাধীন। তারা মানুষের সাথে মেশার খুব আগ্রহ ছিল। অনেক সমুদ্র উপকূলে হলদিমিরকে ভ্রমণকারীদের সাথে খেলাধুলা করতে দেখা গিয়েছে। তার মুখে খাবার ছুঁড়ে দিতেন প্রফুল্লতা পর্যটকরা। বেলুগারা শ্বেত তিমি নামে পরিচিত। কন্ঠের শব্দ বা ডাকের জন্য এরা খ্যাত। পূর্ণবয়স্ক বেলুগা তিমির সারা দেহ সাদা হলেও বাচ্চা অবস্থায় গায়ের রং থাকে গাঢ় ধূসর। মাথার সামনের দিকটা উঁচু। তাই এদের চিনে নিতে কোন অসুবিধা হয় না।

২০১৯ সালে এই তিমি মাছকে যখন দেখা যায় তখন গলায় একটি বেল্টের মতন কিছু বাধা ছিল। তাতে সেন্ট পিটার্সবার্গের কোন যন্ত্র লাগানো ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়। রাশিয়া কি তাহলে তিনি মাছটিকে গোয়েন্দার কাজে লাগিয়েছিল? হলদিমিরের মৃতদেহ পাওয়ার পর রাশিয়ার পক্ষে এই কথাবার্তা প্রসঙ্গে কোন প্রক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় তিমি সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি ভ্লাদিমির পুতিনের রাষ্ট্র।

আগের বছরে অসলোর একটি ফিয়র্ডে দেখা যায় হলদিমিরকে। নরওয়ে প্রশাসন নাগরিকদের অনুরোধ করেছিল, হলদিমিরের কাছাকাছি তারা যেন না যায়।
হলদিমিরের লোকজনদের সাথে বন্ধুত্ব নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে অনেকেই। নরওয়ের কয়েকজন প্রশাসন প্রধানদের দাবি, যেকোনো ঘেরাটোপ থেকে পলাতক হয়েছিল সামুদ্রিক এই প্রাণীটি। এটা রাশিয়ার নৌবাহিনীর শিক্ষা হতে পারে, কারণ প্রাণীটি মানুষের সাথে থাকতে অভ্যস্ত বলে মনে হয়েছিল। তিমি মাছটির বয়স ছিল প্রায় ১৫ বছর। এই তিমি মাছ সাধারণত ৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এদেরকে সাধারণত গ্রীনল্যান্ড, উত্তর নরওয়ে এবং রাশিয়ার কাছাকাছি বরফ জলে বসবাস করতে দেখা যায়। জৈব নিরাপত্তার ভেটেরিনারি ইনস্টিটিউটে পোস্টমর্টেম-এর পর দেহ অবশেষে ধ্বংস করা হয়। এই ক্ষেত্রে আগডারের জাদুঘর এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন ‘হলদিমিরের’ শরীরের কঙ্কাল দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরওয়ের মৎস্য সংস্থা দপ্তর।