অকালবোধন শুধু মাত্র রামায়ণেই নয়, দেবী দুর্গার পুজো হয়েছিল মহাভারতেও

kmc 20241004 153338 6Qkr4mfe8r

আমাদের প্রাচীন মহাকাব্য দুটি, মহাভারত ও রামায়ণ। এর মধ্যে রামায়ণের যে দুর্গাপূজার কথা আছে, সেটা তো সবাই জানে। কিন্তু অপর মহাকাব্যটি, অর্থাৎ মহাভারতেও কি আছে দুর্গাপূজার কোন কথা?

শরতকালের দূর্গা পূজার পেছনে যে আছে স্বয়ং শ্রী রামচন্দ্র, সেই কথা তো আমরা সবাই জানি। রাবনকে বধ করার আগে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ চেয়ে দুর্গাপূজা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। এমনকি পূজোর সময় ১০৮ টি নীল পদ্ম থেকে একটি কম ছিল বলে নিজের একটি আঁখি দিয়ে সেই অভাব পরিপূর্ণ করেছিলেন তিনি। কবি বাঙালি কৃত্তিবাস এমনটাই জানিয়েছে রামায়ণে। কিন্তু আরেকটি মহাকাব্য অর্থাৎ মহাভারতেও দেবী দুর্গার পূজা হয়েছিল?

সেখানে দেখা গেছে দেবী দুর্গার পূজা করা হয়েছিল। মহাভারতে দেবী দুর্গা পূজার দুটি উল্লেখ রয়েছে। এই পূজা কারা করেছিলেন? আর কখন এই দুর্গাপূজার উপাসনা করা হয়েছিল?

এই মহাকাব্যে দেবী দুর্গার কথা পাওয়া গেছে বিরাট পর্বে। সত্যবাদী যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় হেরে যাওয়ার পর শর্তমত রাজ্য ধনসম্পদ সবকিছু হারিয়েছিলেন তারা। তার সাথে যুক্ত হয়েছিল ১২ বছরের জন্য বনবাস এবং এক বছর ছিল অজ্ঞাতবাস। তাদের এই অজ্ঞাত বাসে যদি কেউ তাদের খোঁজ পেয়ে যায় তাহলে আরো ১২ বছর কাটাতে হবে বনবাসে। বনবাসের সময় সমাপ্ত হলে পঞ্চপাণ্ডব অজ্ঞাতবাসের জন্য বেছে নিয়েছিলেন বিরাট নগরকে। কিন্তু সেই রাজ্যে প্রবেশ করার আগেই মুনিরা যুধিষ্ঠিকে উপদেশ দেন, দেবী দুর্গার নিকট তাদের অজ্ঞাত বাসের জন্য সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করার জন্য।

সেই মতো দেবী দুর্গার অর্চনা করেন যুধিষ্ঠির। জব করেন, ‘দুর্গাৎ তারয়সে দুর্গে তৎ ত্বং দুর্গা স্মৃতা, জনৈ।’ যুধিষ্ঠির দুর্গার যে রূপকে পূজা করেছিলেন, তিনি ছিলেন চতুর্ভুজা, চতুর্বক্তা ও সিংহারূঢ়া। এই দেবী ছিলেন মসিনা বর্ণের, সুচারুদর্শনাও। আঁখি ছিল নীল পদ্মর মত গভীর ও সুন্দর। আমাদের পূজিত দেবীর মতো পশু বদের উপাস্য এই দেবীর ও সৃষ্টি হয়েছিল দেবতাদের দেহ নিঃসৃত পুঞ্জিভূত তেজ থেকে। বলা হয়েছে, মহিষমর্দিনীর ঘোর রূপের অর্চনা করেছিলেন যুধিষ্ঠির। তার জবে সন্তুষ্ট হয়ে তার রাজ্য ফিরে পাওয়ার বরদান করেছিলেন দেবী।

মহাভারতে দেবী দুর্গার অর্চনা করেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। কৌরব তরফে নিজেদের বহু আত্মীয়-স্বজনকে দেখে অর্জুন বিবস হয়ে পড়েছিলেন, তাদের নিজেও হস্তে মারতে পারবেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে যা যা পরামর্শ দিয়েছিলেন, গীতা পাঠ করলেই সেই সব কথা জানা যায়। কিন্তু এ কথা কি জানেন, তিনি অর্জুনকে দেবী দুর্গার অর্চনা করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন? কৌরবের বিপক্ষে অনেক সেনাবাহিনীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে নাকি সাময়িকভাবে বিবস হয়ে পড়েছিলেন মহান যোদ্ধা অর্জুন। সেই সময় শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে জব করা আরম্ভ করেন তিনি। দেবী দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেয় শত্রু জয়ের।

সুতরাং মহাকাব্যের স্বাক্ষর অনুসারে, শুধুমাত্র রামায়ণেই নয়, মহাভারতেও আবির বাপ ছিল দেবী দুর্গার। তার মঙ্গলসূচক উক্তি সাথে করে একদিকে রাবনকে বধ করার জন্য নেমেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র, অপরদিকে নিজের রাজ্য উদ্ধারের জন্য কৌরব বিপক্ষে সামনে এসেছিলেন পান্ডবীরা। উভয় পক্ষেই বিজয় হয়েছিল। আর সেই বিজয়ের পথে ছিলেন শত্রু বিনাশিনী দেবী দুর্গা।