অনেক ছোটো বয়স থেকেই স্বপ্ন জয়ের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করেছে সে। কিন্তু তার যাত্রায় শুধু সে একা নয়, সে তার সঙ্গে পেয়েছে তার বাবা মাকেও। তারাও সমানভাবে তাদের সন্তানকে স্বপ্ন জয়ের লক্ষ্যে যাতে কোনকিছু বাঁধা না আসে তা নিশ্চিত করেছেন, ছেলের পাশে থেকেছেন। সেই ছেলেটি হলো দোম্মারাজু গুকেশ। ১৮ বছর পেরোতে না পেরোতেই যার ঝুলিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব জুটেছে। এর পাশাপাশি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে হয়ে ওঠেন বিশ্বের কনিষ্ঠতম দাবাড়ু।
দোম্মারাজু গুকেশ যাকে সকলেই চেনেন ডি গুকেশ নামে। তার জন্ম চেন্নাইয়ে। তার বাবা একজন ইএনটি চিকিৎসক ও মা মাইক্রোবায়োলজিস্ট। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই দাবা খেলা শুরু গুকেশের। ধীরে ধীরে চৌষট্টি খোপের সেই খেলায় কীভাবে নিজের গুটিকে সাজাতে হয় এবং প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে তা শিখেছেন গুকেশ। ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ-এর অ্যাকাডেমির ছাত্র ছিলেন গুকেশ। তার প্রথম দাবা প্রতিযোগিতায় জেতা শুরু অনূর্ধ্ব-৯ এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতা থেকে।
তবে গুকেশের আজকের সাফল্যের পিছনে তার যেমন অবদান রয়েছে তেমনই তার বাবা মায়ের রয়েছে অবদান। একটি ছোটো চারা গাছকে রজনীকান্ত ও পদ্মাকুমারি সার ও জল দিয়ে ধীরে ধীরে বড় করেছেন। গুকেশের খেলায় যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য নিজের পেশা ত্যাগ করেছিলেন রজনীকান্ত। ছেলেকে নিয়ে দেশে বিদেশে গিয়েছেন খেলার জন্য। তখন সংসারে মা পদ্মাকুমারি একা রোজগেরে ব্যক্তি। তিনি হাসি মুখে সবটা সামলেছেন।
গুকেশের খেলার প্রতি যাতে কোনও বাঁধা না আসে তার সবরকম চেষ্টা করেছেন তার বাবা মা। আর তারই ফলাফল দেখচে গোটা বিশ্ব। মাত্র ১২ বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার হন তিনি। এর আগে এর আগে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন রাশিয়ার সের্গে কারজ়াকিন ১২ বছর ৭ মাস বয়সে। গুকেশ যখন গ্র্যান্ড মাস্টার হন তার বয়স ছিল ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন। গ্যারি ক্যাসপারভ ২২ বছর বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তার রেকর্ড ভেঙে গুকেশ মাত্র ১৮ বছরে হন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
এর পাশাপাশি ২০২৫ সালে গুকেশ আরও একটি মাইল ফলক পার করেন। বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারান গুকেশ। এদিকে দাবায় হেরে রাগের মাথায় টেবিলে ঘুষি মারেন ম্যাগনাস। পরে যদিও তিনি গুকেশের কাছে ক্ষমা চান। গুকেশ ২০২২ সালে অলিম্পিয়াডে একক বিভাগে সোনা জিতেছেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি ম্যাচে জিতে গুকেশ ৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার মূল্যে গুকেশ মোট ১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা পান। এর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর সরকার তাকে ৫ কোটি টাকা দিয়েছে। অর্থাৎ ছোটোবেলা থেকে করা পরিশ্রম ধীরে ধীরে যেনো স্বপ্ন ছুঁতে চলেছে গুকেশের।