প্রতিপদেই শুরু হবে বনেদি বাড়ির ৫১৮ বছরের পুজো, নবমী-দশমী সিঁদুর খেলা

kmc 20240918 190914 L4gkq68Y5Y

ভারতে তখনো ইংরেজদের পদার্পণ পড়েনি। কোথায় ছিল রবার্ট ক্লাইভ কোথায় বা জব চার্নক। সালটা ছিল ১৫০৭। হুগলির ‘চৌদ্দ ঘরে’ বসু পরিবারে প্রথম পুজো হয়।

স্বপ্নে আদেশ পেয়ে সীতারাম বসু ঘট পুজোর মধ্য দিয়ে মায়ের পূজো শুরু করেন। মূর্তি পূজো শুরু হয় ১৬০৫ সালে। সেই দায়িত্বের ভার নিয়েছিলেন রঘুনাথ বসু। কয়েক বছর পর চাকরির সূত্রে ভদ্রকালী এলাকায় তিনি চলে যান। এর ফলে পুজো জাঁকজমক কমে যায়। ১৭৪৫ সালে রামনারায়ণ বসু এই পুজো আবার ধুমধাম করে চালু করেন। একদম প্রথম দিকে ত্রিপল দিয়ে ছাউনি করে পূজা করা হতো। পরে মাটির মন্দির। তিন চার পুরুষ আগে সিমেন্টের দালান তৈরি হয়েছে। এখন ওইখানেই পূজো করা হয়।
ধনিয়াখালীর হল্ট স্টেশন থেকে আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি করে ১০-১৫ মিনিট যাওয়ার পরেই ৫১৮ বছরের পুরনো ‘চোদ্দ ঘর’ বসুবাদির দুর্গা উৎসব। গ্রামে ঢালাই রাস্তা। রাস্তার পাশে পাঁচিল দেওয়া মন্দির। ভেতরে ঢুকতেই দুটো ঘর। আর কিছুটা গেলেই সদর দালান। মাঝখানে রয়েছে বলি দেওয়ার স্থান। আগে বলে দিত কিন্তু এখন পুরো বন্ধ আছে। সদর দালানের পেছনে মূল মন্দির। মন্দিরের পেছনে রয়েছে বাধানো পুকুর ঘাট। টলমল করছে জল। মেঘ পেঁজা তুলোর মত। নীল আকাশ, তাল, নারকেলে গাছের ছায়া পড়েছে মন্দিরে।

ইতিহাস সাক্ষী অনেক চমকে দেওয়ার মতো রীতি আছে এই পরিবারের পুজোয়।
মহালয়ার দিনি ডাকের সাজে দেবীকে তৈরি করা হয়। একচালার প্রতিমায় চাল চিত্রে আঁকা থাকে দশ মহাবিদ্যার চিত্র। পিতৃপক্ষের শেষের দিনই মায়ের পুজো আরম্ভ হয়। ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে চণ্ডীপাঠ আরম্ভ করা হয়।

এই বাড়িতে ষোড়োপাচের পূজো হয়। ভাবা হয় কৈলাস থেকে অনেকদিন পর মা আসছেন। তার পথের ক্লান্তি কমাতে বসার জন্য আসন রেখে পদো ধুয়ে ,বস্ত্র ,গয়নাগাটি, ধুনো দিয়ে মায়ের ক্লান্তি দূর করা হয়।
ষষ্ঠীতে মায়ের বোধনের পর পঞ্চদীপ বরণ ডালা এবং চামরের বাতাসে দেবীর বরণ করা হয়। ঐদিন রাতেই কলাবউ-এর স্নান করানো হয়। এখানেও চমক আছে। কলা বউর গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। তারপর সপ্তমীর দিন মন্দিরের কাছের পুকুর থেকে পত্রিকার স্নান সম্পূর্ণ করা হয়।

তারপর সপ্তমী অষ্টমী নবমী ও দশমীর পুজো পরিবারের নিয়মেই করা হয়। অনেক আগেই এখানে মহিষ বলি দেওয়া হত। এখন বলি দেওয়া বন্ধ কিন্তু সেই বলি দেওয়ার খর্গ এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে তাদের কাছে। নবমী ও দশমী এই দুদিন সিঁদুর খেলা হয় এই পরিবারে।

দশমীর দিন নীলকন্ঠ ও শঙ্খচিল পাখি দেখার জন্য পরিবারের সবাই হাঁটা আরম্ভ করেন। কিন্তু এখনো ওই পাখিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই তারা অন্য পথ বেছে নিয়েছে। দূরে অন্য একটি গ্রামে মন্দিরে বানানো হয়েছে নীলকন্ঠ ও শঙ্খচিলের মূর্তি। পরিবারের সদস্যরা ওই বানানো পাখি দুটি দেখেই গৃহে ফিরে আসেন।

dash ghara 3CmTiyka8H
বনেদি পরিবারের মহিলারা

পরিবারের সদস্য তুষারকান্তি বসু জানান, “আমরা পুজোর নিয়মে কোন পরিবর্তন করিনি। বংশ-পরম্পরায় চলে আসা নিয়ম মেনেই করা হয় পুজো। এ বছরও তাই হবে। পুজোর এ কটা দিন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়-স্বজন এক জায়গায় হই। অপেক্ষায় থাকি সারা বছর এই দিনগুলির জন্য।

আরও পড়ুন,
*করজোর করে শিবলিঙ্গকে প্রণাম করতে গিয়ে অষ্টধাতুর নাগমূর্তি নিয়ে চম্পট দিল চোর, জনপ্রিয় ভিডিও