দেবীর উপাসনা ৯ রূপে! নবরাত্রি সংযমে দূর্গাপূজার ফল মেলে

kmc 20240925 155843 1Q6jM2BR41

শ্রী রামচন্দ্র শরতকালের দেবীর অকালবোধন করেছিলেন। রাবণের সাথে লড়াই হওয়ার পূর্বে একটানা ন’দিন ধরে দেবীর নয়টি রূপকে পূজা করেছিলেন শ্রীরাম। তারপর থেকেই পৃথিবীতে নবরাত্রি সংযমের প্রচলন হয়। এটা মূলত উত্তর ভারতের উদযাপন করা হয়, তবে গোটা দেশেই পালন করা হয় এই বিশেষ সংযম। দেবীর কোন কোন রূপের পূজো হয় এই কদিন ধরে? আসুন জেনে নিই।
দেবী মহামায়া আদ্যশক্তি। কখনো তিনি কাল ধারণ রূপে কালি। কখনো স্নেহময়ী জগতের মাতা। তিনি আবার গিরি রাজের মেয়ে। পুরানে দেবীর অনেক রূপের বর্ণনা মেলে। তার মধ্যে বিশেষ নয়টি রূপ নিয়ে তৈরি নবদুর্গা। ৯ দিন ধরে দেবীর নয়টি রূপকে অন্য অন্যরূপকে পুজো করার চল রয়েছে। একেই বলা হয় নবরাত্রীর সংযম। রীতি অনুযায়ী, এই নয়দিন সংযমকে পুরো সাত্ত্বিক ভাবে থাকতে হয়। আর সংযম সমাপ্ত হলে ৯ টি কুমারী কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করতে হয়।

নব দুর্গার প্রথম রূপ দেবীর শৈলপুত্রী। শৈল মানে পাহাড়। দেবী পার্বতী ছিলেন পাহাড়ের নৃপতি হিমালয়ের মেয়ে। ওই রূপেই তিনি দেখা দেয় নবরাত্রির প্রথম দিনটিতে। দেব নীরব, শান্ত শুভ্রবর্ণ। তারপরই দেবীর ব্রহ্মচারীণী রূপের কথায় আসে। তার পূজো করা হয় নবরাত্রিতে দ্বিতীয় দিনে। পুরাণের মতে, দেবী পার্বতী মহাদেবকে নাথ রূপে পাওয়ার জন্য যে কঠোর উপাসনা করেন, তারই রূপ ব্রহ্মচারীণী। এই দেবীর মস্তকের জটা ও হাতে কমণ্ডলু। দেবীর তৃতীয় স্বরূপ চন্দ্রঘণ্টা। তিনি সিংহের ওপর অবস্থান করেন। হস্তে ঘন্টা থাকে বলেই দেবীর এই রূপ নাম। এই দেবী হচ্ছে বীরের চিহ্ন।

দেবীর চতুর্থ স্বরূপ কুষ্মাণ্ডা। তিনি প্রধানত রোগ নিবারণ করেন। তারপরই দেবীর মাতৃরূপের প্রদর্শন। নব দুর্গার পঞ্চম স্বরূপ হল দেবী স্কন্দমাতা। দেবীর প্রতিমাতে কোলে দেখা যায় কার্তিকে। এর জন্যই দেবীর নাম স্কন্দমাতা। দেবীর ষষ্ঠ স্বরূপ কাকত্যায়নী। প্রাচীন পুরান অনুযায়ী, দেবী পার্বতী ঋষি কাকত্যায়নের মেয়ে রূপে জন্ম নিয়ে কাকত্যায়নী নামে জ্ঞাত হন। কালরাত্রি দেবীর সপ্তম রূপ। কালরাত্রি দেবীর একটা ভয়ংকর স্বরূপ। সিংহ না এই দেবীর বাহন হয় গাধা।

এলোমেলো চুলে ভীষনা পুরো কৃষ্ণবর্ণে। অনেকে মনে করেন কালরাত্রি দেবীর পূজা করলে শত্রুর শেষ হয়। অনেক অসুরকে দেবীর নিজেই বদ করেছিলেন। তারপর দেবীর প্রকাশ মহাদেবের সহধর্মিনী রূপে। অষ্টম রূপে তিনি হরগৌরী। শিবের বাহনের মতন কারো বাহন ষাঁড়। চতুর্ভুজা দেবী। নবদুর্গার সব শেষের স্বরূপটি হল দেবী সিদ্ধিদাত্রী। দেবীর এই বিশেষ রূপকে পূজা করলে যেকোনো কাজের সুফল নিশ্চিত। শাস্ত্রমতে তিনি অনুগামীদের সিদ্ধি দান করেন। তাই তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে যেকোনো রকম কাজের সুফল অনিবার্য। নবরাত্রি সংযম এর সময় দেবীর এই নয়টি স্বরূপকে সমানভাবে আরাধনা করতে হবে। ফল পাওয়া যাবে সম্পূর্ণ ভাবেই।

বছরে একবার না, দুইবার নবরাত্রি পালন করার রীতি রয়েছে। বাংলায় যেমন দূর্গাপূজা ও বাসন্তীপূজা আছে। নবরাত্রি পুজোতেও ঐরকমই রীতি রয়েছে। প্রথমে আশ্বিন মাসে ও তারপর চৈত্র মাসে। একইভাবে দুর্গার নয়টি স্বরূপের উপাসনা করা হয়। অনেকে আবার চৈত্র মাসের নবরাত্রি কে গুপ্ত নবরাত্রি বলেন। তবে অনেকেই এই সংযম গৃহে নিয়মনিষ্ঠা অনুযায়ী পালন করে থাকেন। কোন নির্দিষ্ট মনের বাসনা নিয়ে সংযম করলে ফল অবশ্যই পাওয়া যায়। আবার অনেকে বলেন সঠিকভাবে পালন করলে নাকি নবরাত্রি সংযমে দুর্গাপূজার ফল পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিক মতে দেখলে নবরাত্রি পালন করার জন্য যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।
আসলে শরৎকাল ও বসন্তকাল বছরের দুবারই ঋতু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যার জন্য দেহে অনেক রকম সমস্যায় পড়তে হয় সবাইকে। এবার এই সময় যদি অনেক তামসিক খাবার খাওয়া হয়, তাহলে ওই সমস্যা আরো বারবে, কমবে না। এই সংকট থেকে উদ্ধার হতে এই সংযমের উৎপত্তি। ঋষি মুনিরা সর্ব দিক বিবেচনা করে সংযমের নিয়মাবলী তৈরি করেছিলেন।

নিরুপিতকাল -এর সময় যদি কেউ দৈবের জন্য সাত্ত্বিক খাবার খায়, তাহলে তা সম্পূর্ণ শুভ লক্ষণ। আস্তে আস্তে লোকজনকে এই সংযমের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য নানা ধরনের অনেক দৈব কাহিনী প্রলুব্ধতা ছাপিয়েছে। অপরদিকে সংযম উদযাপনকারীরা যখন বুঝতে পেরেছে সংযমের ফলে দেহ অনেকটাই সুস্থ থাকে, তখনই দেবীর আরো মাহাত্ম্য প্রকাশ্য পেয়েছে। আর এই ভাবেই দিনের পর দিন অসংখ্য অনুগামীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই পূজার রীতিনীতির কথা।