আজকাল ওজন কমানোর কথা উঠলেই অধিকাংশ মানুষ ভাবেন জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হবে, ভারী ব্যায়াম করতে হবে বা কঠোর ডায়েট মানতে হবে। কিন্তু বাস্তবে শরীরচর্চার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়গুলোর একটি হলো— হাঁটা। বিশেষ কোনো সরঞ্জাম লাগে না, বাড়তি কৌশল লাগে না, আর সব বয়সের মানুষই এটি করতে পারেন। তবুও অনেকেই হাঁটার গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে সহজ এই অভ্যাসটিকে তারা দৈনন্দিন রুটিনে ঢোকান না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো— শুধু হাঁটলেই কি সত্যিই ওজন কমে? আর ১ কেজি ওজন কমাতে ঠিক কতটা হাঁটতে হবে?
এবার সেই উত্তর দিলেন সার্টিফায়েড ফিটনেস ও নিউট্রিশন কোচ স্বপ্নিল।
১ কেজি ফ্যাট কমাতে প্রয়োজন প্রায় ৭৭০০ ক্যালোরি বার্ন
ফিটনেস কোচ স্বপ্নিল জানান, মানবদেহে ১ কেজি ফ্যাটে থাকে প্রায় ৭৭০০ ক্যালোরি। অর্থাৎ, ১ কেজি ওজন কমাতে হলে আপনাকে এই ক্যালোরিটুকু খরচ করতে হবে চলাফেরা, কার্যকলাপ বা ব্যায়ামের মাধ্যমে।
হাঁটার ক্ষেত্রে দেখা গেছে—
১০০০ কদম হাঁটলে ৫০–৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন হতে পারে
(ব্যক্তিভেদে গতি, ওজন, বয়স অনুযায়ী পার্থক্য থাকে)।
এই হিসেবে ৭৭০০ ক্যালোরি খরচ করতে প্রয়োজন—
👉 প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার কদম হাঁটা।
সংখ্যাটি শুনে প্রথমে ভয় লাগলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিকে দিনে ভাগ করে নিলেই কাজটি হয়ে যায় সহজ।
প্রতিদিন ১০–১৫ হাজার কদম হাঁটলে ১০–১২ দিনেই ১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব
ফিটনেস কোচ স্বপ্নিলের মতে, যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের জন্য লক্ষ্যটি খুব কঠিন নয়।
কারণ—
প্রতিদিন ১০,০০০ কদম হাঁটলে
✔ ১৪ দিনে
আর প্রতিদিন ১৫,০০০ কদম হাঁটলে
✔ মাত্র ১০–১২ দিনেই
আপনি ১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারেন।
সবচেয়ে বড় কথা, এর জন্য আলাদা করে ভারী ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। হাঁটা শরীরকে ক্লান্ত না করেই দীর্ঘসময় পর্যন্ত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
হাঁটার আরও কিছু বড় উপকারিতা
ফিটনেস কোচ স্বপ্নিল জানান, হাঁটা শুধু ওজন কমানোই নয়—সার্বিক সুস্থতার জন্য অসাধারণ উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে—
✔ হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে
নিয়মিত হাঁটলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
✔ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
হাঁটায় শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা স্ট্রেস কমায় ও মন ভালো রাখে।
✔ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়।
✔ জয়েন্ট ও হাড়কে মজবুত করে
ভারী ব্যায়ামের মতো অতিরিক্ত চাপ পড়ে না, ফলে বয়স্করাও নিশ্চিন্তে করতে পারেন।
✔ ঘুমের মান উন্নত করে
হালকা ব্যায়াম হওয়ায় রাতে ঘুমও ভালো হয়।
হেঁটে সুস্থ থাকার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
প্রতি ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫–১০ মিনিট দাঁড়ান বা হাঁটুন
দৈনন্দিন কাজে (বাজার, অফিস, স্কুলে যাওয়া) যতটা সম্ভব হাঁটা যুক্ত করুন
দ্রুত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন
মোবাইল অ্যাপ বা স্মার্টওয়াচে কদম গোনার ব্যবস্থা রাখুন
রাতের খাবারের পরে অন্তত ১৫–২০ মিনিট হাঁটুন
আরও পড়ুন,
২ ডিসেম্বর রাহুর গতি বদল: তিন রাশির বড় আর্থিক লাভ
শেষ কথা
ওজন কমাতে গেলে শুধু ডায়েট বা কঠোর ব্যায়ামই নয়—নিয়মিত হাঁটা হতে পারে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। কোনো চাপ নেই, বেশি খরচ নেই, শুধু প্রতিদিনের কিছুটা সময়। সঠিকভাবে বজায় রাখতে পারলে মাত্র কয়েক দিনেই এর প্রভাব দেখা যায়।
তাই ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
আজ থেকেই হাঁটার অভ্যাস শুরু করুন। প্রতিদিনের ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনাকে পৌঁছে দেবে সুস্থ শরীরের পথে।
