এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রিল্যাক্সেশন থেরাপির অংশ হিসেবে তলপেট মালিশ বা অ্যাবডমিনাল ম্যাসাজ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। থাইল্যান্ড, চিন, জাপান, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির স্পা ও সালোঁয় বহু দিন ধরেই এই পদ্ধতি প্রচলিত। তবে এখন শুধু রূপচর্চা নয়, স্বাস্থ্য রক্ষণেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি একাধিক গবেষণায়। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তলপেট মালিশ জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করছে বলে পাওয়া গিয়েছে তথ্য।
হজম ও স্নায়ুতন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দিষ্ট গতিতে পেটে চক্রাকারে মালিশ করলে ভ্যাগাস নার্ভ উদ্দীপিত হয়। এই নার্ভ শরীরের প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত, যা হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই কারণে নিয়মিত তলপেট মালিশ অন্ত্রের গতিময়তা উন্নত করতে পারে।
কোলনের আকৃতি মাথায় রেখে ইংরেজি হরফ ‘I’, ‘L’ এবং ‘U’–এর আকৃতি অনুসরণ করে মালিশের পরামর্শ দেন থেরাপিস্টরা। কেউ কেউ আবার ঘড়ির কাঁটার দিকেও হাত ঘোরান। সপ্তাহে কয়েকবার ৫-১৫ মিনিট ধরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে গ্যাস-পেটফাঁপার সমস্যা কমতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের একটি অংশের।
গবেষণার ফল: উপকার মিলেছে বহু অংশগ্রহণকারীর
২০২৩ সালে প্রকাশিত ১৩টি গবেষণার যৌথ পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় ৮০০ জন যাঁরা নিয়মিত তলপেট মালিশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে—
কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ কমেছে
সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে
এ ছাড়া আরও কিছু পৃথক গবেষণায় উঠে এসেছে, তলপেটের পেশি শিথিল হলে মানসিক চাপ কমে এবং অনেকেই মানসিকভাবে ভালো অনুভব করেন। কারণ পেটের পেশির আরাম প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
গ্যাস ও পেটফাঁপায় স্বস্তি
হালকা চাপের এই মালিশে অন্ত্রে জমে থাকা গ্যাস, মল বা তরল পদার্থ সহজে বেরিয়ে যেতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথাও জানান গবেষকরা। শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থেকে পিএইচ ভারসাম্য—অন্ত্রে থাকা অণুজীবগুলি যেসব সূক্ষ্ম পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে, মালিশ সেই সমস্ত প্রক্রিয়াকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে সতর্কতাও জরুরি
চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ—
* পেটে অস্ত্রোপচারের ইতিহাস থাকলে
* তীব্র ব্যথা বা প্রদাহ থাকলে
* গুরুতর হজমজনিত রোগ থাকলে
এই পদ্ধতি একদমই প্রয়োগ করা উচিত নয়। তাছাড়া তলপেট মালিশ এখনও কোনও নিশ্চিত চিকিৎসা পদ্ধতি নয়; বরং এটি সহায়ক বা সম্পূরক উপায় হিসেবে ব্যবহার করা উচিত, ওষুধের বিকল্প হিসেবে নয়।
শেষ কথা
তলপেট মালিশ নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে আগ্রহ বাড়ছে। আরামদায়ক থেরাপি হিসেবে তো আছেই, পাশাপাশি গবেষণায় উঠে আসা সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও নজর কেড়েছে। যদিও নিশ্চিত উপসংহার টানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন, স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত যত্ন হিসেবে এই পদ্ধতি অনেকের জীবনযাত্রায় জায়গা করে নিচ্ছে ইতিমধ্যেই।
আরও পড়ুন
নতুন বছরের আগে ঘর থেকে সরান ৭টি জিনিস! বাস্তুর নিয়ম মানলে মিলবে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ
