ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) তৈরি মানুষের বহনযোগ্য ট্যাঙ্কবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র — ম্যান-পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল (এমপিএটিজিএম) — প্রাথমিক স্তর থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ের সফল পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, সেনা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফলকে সন্তোষজনক হিসেবে মূল্যায়ন করেছে এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে আগামী বছরের মধ্যে সরবরাহ শুরু হতে পারে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি আনুমানিক ৩০ কেজি ওজনের এবং কাঁধে রেখে নিক্ষেপযোগ্য লঞ্চারসহ ডিজাইন করা হয়েছে। এতে ইনফ্রারেড ভিশন সিস্টেমের মাধ্যমে ট্যাঙ্ক চিহ্নিত করা যায় এবং পাল্লা ২০০ মিটার থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। পরীক্ষায় জ্যাভলিনের মতো ‘শোল্ডার-ফায়ারড’ লাঞ্চার ব্যবস্থার সাদৃশ্য দেখা গেছে, তবে এটি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশীয়ভাবে তৈরি।
বর্তমান ভারতীয় সেনা হাতে থাকা সোভিয়েত যুগের ‘কনকার’ ও ‘মিলান’ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এমপিএটিজিএম-এ রয়েছে আধুনিক সুবিধা। বিশেষত ‘ফায়ার-এন্ড-ফরগেট’ প্রযুক্তি থাকায় লক্ষ্যমাত্রায় ছোঁড়ার পর অপারেটরকে সেখানেই থেকে লক্ষ্য রেখে যাবার প্রয়োজন নেই — দ্রুত সরে যাওয়া সম্ভব, ফলে সৈন্যদের জীবনের ঝুঁকি কমে যায়। পরীক্ষা অনুযায়ী, প্রশিক্ষিত এক সেনাই একটিমাত্র সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন; তবে পুরো ইউনিট (ট্রাইপড ও কমান্ড লঞ্চ ইউনিটসহ) পরিচালনার জন্য দুইজনের প্রয়োজন হতে পারে।
সরকারি সূত্রে আরও জানা যায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের উদ্যোগে জরুরি ক্রয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; তাতে ১২টি লঞ্চার ও ১০৪টি ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে এই এমপিএটিজিএম জ্যাভলিনের একটি দেশীয় বিকল্প হিসেবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ডিআরডিও এবং সেনা একযোগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সরবরাহশৃংখলা ও মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করছে যাতে দ্রুত কিন্তু নিরাপদভাবে массов উৎপাদন ও বিতরণ শুরু করা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক অনুমোদন শেষে সময়মত উৎপাদন শুরু ও সেনাবাহিনীতে হস্তান্তর নিশ্চিত করার কাজ চলবে।
FAQ
1. এমপিএটিজিএম কি?
এমপিএটিজিএম (ম্যান-পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল) একটি মানুষের বহনযোগ্য ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র, যা কাঁধে বহন করে লঞ্চ করা যায়।
2. এর ওজন ও পাল্লা কত?
আনুমানিক ওজন ~৩০ কেজি; পাল্লা ২০০ মিটার থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত।
3. এতে কী বিশেষ প্রযুক্তি আছে?
এতে ইনফ্রারেড ভিশন আছে এবং ‘ফায়ার-অ্যান্ড-ফরগেট’ প্রযুক্তি রয়েছে, যার ফলে লক্ষ্য নিক্ষেপের পরটি অপারেটর সেখানে থেকে সরতে পারেন।
4. জ্যাভলিনের সঙ্গে এর তুলনা কী?
কার্যকারিতার দিক থেকে জ্যাভলিন-সদৃশ; পাল্লা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। জ্যাভলিন আমদানি করা হয়েছে জরুরি ক্রয়ে; এমপিএটিজিএম ভবিষ্যতে দেশীয় বিকল্প হবে।
5. একজন সৈন্য কি এটি ব্যবহার করতে পারবেন?
প্রশিক্ষিত এক জন সৈন্য লঞ্চার ব্যবহার করতে পারবেন; পুরো সিস্টেম (ট্রাইপড ও CLU) বহন ও নিয়ন্ত্রণে সাধারণত দুইজন দরকার পড়ে।
6. এটি কি খোলা মাঠের বিরুদ্ধে কার্যকর?
হ্যাঁ — বিশেষত ট্যাঙ্ক ও হেভি বর্মযুক্ত যান বিরুদ্ধে এটি কার্যকরীভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
7. কবে থেকে সেনাবাহিনীতে সরবরাহ শুরু হবে?
সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদনের পর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে আগামী বছরের মধ্যে সরবরাহ শুরু হতে পারে — সরকারি চ্যানেল থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
8. কোন পরিবেশে এটি ব্যবহার করা যাবে না?
অত্যন্ত ঘন কুয়াশা, শক্তিশালী ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বা উন্নত কন্ট্রামেজার ব্যবস্থার সম্মুখে কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে — নির্দিষ্ট পরীক্ষায় এসব দিক বিবেচিত হবে।
9. এটি কি শুধু ট্যাঙ্কই নষ্ট করতে পারে?
প্রধান উদ্দেশ্য ট্যাঙ্ক ও বর্মযুক্ত যানবাহন; তবে উপযুক্ত হেডের মাধ্যমে অন্যান্য কড়াকড়ি লক্ষ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
10. এটি কীভাবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রচেষ্টার অংশ?
এমপিএটিজিএম দেশের অভ্যন্তরে ডিআরডিও ও অংশীদারি উদ্যোগে তৈরি; বাণিজ্যিক উৎপাদন হলে দেশীয় শিল্প অংশগ্রহণ বাড়বে ও আমদানি নির্ভরতা কমবে।
#DRDO #ManPortableMissile #MakeInIndia
