মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী পুজোয় কেমন রীতিনীতি মানা হয়, লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি আঁকা হয় কার আদলে? জানেন

kmc 20241016 170927 nJMmIv2G82

দুর্গা পুজোর পর অপেক্ষার পালা চলে লক্ষ্মী পুজোর। দুর্গা পুজো শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফের পূজিত হন মা লক্ষ্মী। এই লক্ষ্মী পুজো নিয়ে অনেকের নজর থাকে ভবানীপুরের গিরিশ মুখার্জি রোড, উত্তমকুমারের বাড়িতে। প্রতিবছর এই বাড়িতে কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মী পূজিত হন। তবে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীর পুজোর রয়েছে একটি ইতিহাস। উত্তম কুমার তার ছেলে গৌতমের জন্মের পর এই লক্ষ্মী পুজো শুরু করেছিলেন।

এরপর থেকে প্রজন্মের পর সেই ধারা বজায় রয়েছে। এই বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার রয়েছে বিশেষ বিশেষত্ব। এই বিষয়ে উত্তম কুমারে নাত বৌ অর্থাৎ গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী দেবলীনা কুমার জানান, “আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার বিশেষত্ব হল তাঁর মুখ। প্রথম বার আমার দিদিশাশুড়ির মুখের আদলে প্রতিমার মুখের ছাঁচ তৈরি হয়েছিল। সেই ধারা আজও বজায় রয়েছে।” এই বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার মুখ তৈরি করা হয়েছিল উত্তম কুমারের স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে।

এই প্রসঙ্গে একটি কাহিনি রয়েছে। সেইসময় ‘যদুভট্ট’ ছবির শ্যুটিং-এর জন্য মূর্তি গড়ছিলেন শিল্পী নিরঞ্জন পাল। সেইসময় শ্যুটিং ফ্লোরে যাওয়ার সময় পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন উত্তম কুমার। সেই দৃশ্য তার চোখে পড়ার পর তিনি নিরঞ্জন পালকে বাড়িতে ডেকে পাঠান মূর্তি গড়ার জন্য। এরপর শিল্পী বাড়িতে এসে উত্তম কুমারের খোঁজ করতে শুরু করেন। কিন্তু সেইসময় উত্তম কুমার বাড়িতে ছিলেন না৷ গৌরীদেবী সেইসময় ঘর মুছছিলেন।

তখন শিল্পীকে গৌরীদেবী ঘোমটার ফাঁক দিয়ে বসতে বলেন। আর সেইসময় গৌরীদেবীকে মূহুর্তের জন্য দেখেন শিল্পী নিরঞ্জন পাল। তখনই শিল্পীর মনে লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি আঁকা হয়ে যায়। তিনি স্থির করেন গৌরীদেবীর মুখের আদলে লক্ষ্মী দেবীর মুখ তৈরি করবেন। তাই প্রতিবছর কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আনার পর নতুন করে সাজানো হয়। মূর্তির পরনে থাকা লাল পাড় সাদা শাড়ি পাল্টে নতুন শাড়ি পরানো হয়।

এই প্রসঙ্গে বাড়ির বৌ দেবলীনা বলেন, ““প্রতি বার আত্মীয়-পরিজনের কেউ না কেউ শাড়ি দেন। এ বার যেমন আমার মা বেনারসি দিয়েছেন। সেই শাড়িটিই প্রতিমার অঙ্গে উঠবে। সঙ্গে সোনা, সোনার জল করা বেশ কিছু রুপোর গয়নাও থাকবে।” এরপর পুজো মিটে গেলে বিসর্জনের সময় ফের পরিয়ে দেওয়া হয় লাল পাড় সাদা শাড়িটি। সেইসময় আগের পরানো শাড়িটি বাড়ির বৌকে তুলে দেওয়া হয়।

লক্ষ্মী দেবীর পুজো প্রতিটি বাড়ির নিয়ম আলাদা৷ তেমনই চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে লক্ষ্মী পুজোয় রান্না হয় বিশেষ ভোগ। আর সেই ভোগ রান্না সকলে করতে পারেন না। পরিবারের দীক্ষিত সদস্যরাই ভোগ রান্না করতে পারেন। লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, ডাল, চাটনি, মিষ্টি সবকিছুই থাকে সেই ভোগে। এর পাশাপাশি থাকে নাড়ু। নারকেল ও তিল ছাড়াও আনন্দের নাড়ু থাকে।

দেবলীনা বলেন, “আমরা তো এ দেশীয়। তাই বাড়ির রীতি মেনে তৈরি হয় আনন্দ নাড়ু। নারকেল, তিল বা ক্ষীরের নাড়ুর চেয়েও ওই নাড়ুটির গুরুত্ব এ বাড়িতে বেশি।” পুজোর দিন সকলে কাজ ভাগ করে নেন। পুজোর পরদিন দেবী লক্ষ্মীর সাজ বদলে যায়। ফুলের সাজে তাকে সাজানো হয়৷ ফুলের মুকুট, ফুলের মালা, বাজুবন্ধে সাজিয়ে তোলা হয় তাকে। এরপর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।