নৈহাটিতে ফের এক মর্মান্তিক ও রহস্যজনক ঘটনার সামনে দাঁড়াল শহর। কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের স্মৃতি উসকে দিয়ে নৈহাটি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাস্ত্রী রোডে উদ্ধার হল এক মহিলার পচাগলা দেহ। অভিযোগ, কয়েক দিন ধরেই বিছানায় পড়ে থাকা স্ত্রীর মৃতদেহ আগলে দিন কাটাচ্ছিলেন তাঁর অসুস্থ স্বামী এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম পুত্র।
মৃত মহিলার নাম তৃপ্তি নন্দী (৫৫)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তৃপ্তি। তাঁর স্বামী গৌর নন্দীও শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তাঁদের একমাত্র পুত্র বিশেষ ভাবে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতেই কয়েক দিন আগে তৃপ্তির মৃত্যু হলেও বিষয়টি বাইরে প্রকাশ পায়নি।
প্রতিবেশীদের দাবি, ওই বাড়ি থেকে দীর্ঘ সময় কোনও সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার বিকেলে হাওড়া থেকে তৃপ্তির বোন দিদির খোঁজ নিতে আসেন। সেই সময়ই ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরোতে দেখেন তিনি। সন্দেহ হওয়ায় ঘরে ঢুকে দেখেন, বিছানায় পড়ে রয়েছে তৃপ্তির পচাগলা দেহ। দেহের দু’পাশে বসে রয়েছেন তাঁর স্বামী ও পুত্র।
তৎক্ষণাৎ তৃপ্তির বোন প্রতিবেশীদের খবর দেন। এরপর স্থানীয়রা নৈহাটি থানায় যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে এবং তৃপ্তির দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
অসুস্থ অবস্থায় তৃপ্তির স্বামী গৌর নন্দীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ তাঁর সঙ্গে কথা বলছে এবং গোটা ঘটনার প্রেক্ষাপট জানার চেষ্টা করছে। বিশেষ ভাবে সক্ষম পুত্রের অবস্থাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রতিবেশীদের অনেকেই বলছেন, পরিবারের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কারণেই হয়তো কেউ বাইরে যোগাযোগ করতে পারেননি। নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় জানান, এর আগেও নৈহাটিতে এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল।
আরও পড়ুন
জানুয়ারিতে সরকারি কর্মীদের টানা ছুটির বন্যা! দুই দফায় মিলছে ১০ দিনের ছুটি
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে কলকাতার বহুল আলোচিত রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের। সেখানে বোনের মৃতদেহ আগলে দীর্ঘদিন বাড়িতে ছিলেন দাদা পার্থ দে। পরে ওই বাড়ি থেকে দুই কুকুরের কঙ্কাল ও বাবার দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
আরও পড়ুন
গড়বেতায় থামবে দিঘা–পুরী–রাঁচি–কামাখ্যার একাধিক ট্রেন, বছরশেষে যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা
নৈহাটির এই ঘটনা ফের একবার সমাজের একাকীত্ব, অসুস্থতা ও মানসিক অবসাদের অন্ধকার দিক তুলে ধরল। তদন্তের পরেই স্পষ্ট হবে, তৃপ্তি নন্দীর মৃত্যুর পেছনে আসল রহস্য কী।
আরও পড়ুন
রেপো রেট কমার প্রভাব: এসবিআই ও আইওবির ঋণে সুদ কমায় গ্রাহকদের স্বস্তি