পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধল। রাজ্যের ৩৫টি জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় অন্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন (এনসিবিসি)। মঙ্গলবার লোকসভায় এই তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বিএল বর্মা। প্রশ্নটি করেছিলেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
লোকসভায় জগন্নাথ জানতে চান, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় মোট ৪৬টি জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল কি না। তাঁর আরও প্রশ্ন ছিল—এর মধ্যে ৩৭টি জনগোষ্ঠীকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল কি না। পাশাপাশি তিনি কলকাতা হাই কোর্টে চলমান ওবিসি শংসাপত্র মামলার প্রসঙ্গও তোলেন এবং জানতে চান, আদালতের নির্দেশের পর কোন কোন সম্প্রদায় তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।
উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বিএল বর্মা জানান, ২০১১ সালে রাজ্য সরকার ৪৬টি জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় তালিকায় যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। এনসিবিসি সেই সময় ৩৭টি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেয় এবং ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে এনসিবিসি নয়া মূল্যায়নের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ৩৫ জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এর পরপরই বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেন, বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা ৩৫টি জনগোষ্ঠীর সবকটিই মুসলিম সম্প্রদায়ের ওবিসি গোষ্ঠী। যদিও কেন্দ্রীয় উত্তরে এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও উল্লেখ নেই।
এই ইস্যুর মূলে রয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের আগের রায়। ২০২৩ সালের ২২ মে আদালত জানায়—২০১০ সালের পর রাজ্যের তালিকায় যেসব ওবিসি সম্প্রদায় যুক্ত হয়েছে, সেগুলি বাতিল। পাশাপাশি ওই সময় থেকে জারি হওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্রকেও অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। আদালত নির্দেশ দেয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পেশাগত ভিত্তিতে সমীক্ষা করে নতুন করে তালিকা তৈরি করতে হবে রাজ্যকে।
আরও পড়ুন
প্রেমের সুড়ঙ্গ: চার ঋতুর রঙে সাজানো ইউক্রেনের স্বপ্নপুরী পথ
নির্দেশ অনুসারে রাজ্য সরকার সমীক্ষা চালিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধেও মামলা হয় এবং ২০২৪ সালের ১৭ জুন হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। এই স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন
শিয়ালদা ডিভিশনে নতুন এসি লোকাল পরিষেবা, রুট ও সময়সূচি
এখন এনসিবিসির নতুন পর্যবেক্ষণের ফলে ওবিসি তালিকা নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্যের সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। বিজেপি ও তৃণমূল—দু’পক্ষই ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দিতে শুরু করেছে। আগামী দিনে আদালতের রায় ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ওবিসি পরিবারের ভবিষ্যতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
এস-৫০০ Vs এস-৪০০: পুতিনের ভারত সফরে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম নিয়ে বড় আলোচনা