ভারতের বুকে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে শাসন চালিয়েছিল মুঘল সাম্রাজ্য। বাবরের হাত ধরে শুরু হওয়া এই সাম্রাজ্যের শেষ কীভাবে হয়েছিল তা অনেকেরই অজানা। এবার এই বংশের এক বেগমের দাবি হল ভারতের লাল কেল্লায় তার সম্পত্তির ভাগ রয়েছে। তিনি হলেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বংশের বেগম সুলতানা। তিনি বর্তমানে হাওড়ার ফোরশোর রোডের কাছে গঙ্গা-ঘেঁষা এক বস্তিতে থাকেন।
সেখানে আলো ও কাঁদায় কোনোমতে দিন গুজরান করেন তিনি। মাঝেমধ্যে মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকে না। তার হাঁটুতে যন্ত্রণা। একটানা বেশিক্ষণ হাঁটতে পারেন না তিনি। জল কাঁদা পার হয়ে রাস্তার কল থেকে জল আনতে হয় মোগল বংশের ‘বর্তমান’ বেগমকে। কিন্তু তার বংশ পরিচয় গৌরবময়। তাই তিনি মনে করেন লাল কেল্লায় তার ভাগ রয়েছে। এই কষ্টের দিনে তার মুখে হাসি ফুটেছে।
কারণ তাকে নিয়ে তৈরি হতে চলেছে নতুন ছবি৷ ছবির কাজ প্রায় পাকা। জানা যাচ্ছে, মোগল সাম্রাজ্যের বংশধরদের নিয়ে সবকিছু ছবির মধ্যে তুলে ধরতে চান পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্ত। সেই ছবির নাম হতে চলেছে ‘দ্য লাস্ট কুইন’। পরিচালকের মতে ভারতের ইতিহাসে বাহাদুর শাহ-এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে হাওড়াবাসী সুলতানার খবর কেউ সেভাবে রাখে না। তবে বছর তিনেক আগে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে সকলের নজরে আসেন।
আদালতে তিনি দাবি করেন, লাল কেল্লায় তাদের অংশের ক্ষতিপূরণ চাই। কিন্তু তার আবেদন আদালত গ্রহণ করেনি৷ তবে দমে যাননি সুলতানা। জানা যাচ্ছে, তিনি ফের পয়সা জমিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আবারও আইনজীবী নেবেন। তার কথায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব রাজবংশের বড় বড় প্রাসাদ রয়েছে। অনেক টাকা পেনশন। শুধু তাদেরই কিছু দেওয়া হয়নি৷
মোগল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহের পুত্র জওঁয়া বখ্ত, পৌত্র জামশেদ বখ্ত আর প্রপৌত্র মির্জা মহম্মদ বেদার বখ্ত। বেদার বখ্ত দেশের নানান প্রান্তে ঘোরার পর শেষে বাংলায় এসে ওঠেন। তার স্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের থেকে ‘সুলতানা’ স্বীকৃতি পেয়েছে। মাসে তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ছয় হাজার টাকা পেনশন পান তিনি৷ কিন্তু এই টাকায় তার দিন চলে না। তবে নতুন ছবি হবে তা শুনে একটু আশার আলো দেখছেন চার মেয়ে ও এক ছেলের মা সুলতানা।
নতুন ছবি মোবাইলে দেখা যাবে তা শুনে নিমরাজি থেকে অনেকটাই রাজি হয়েছেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর কখনও চুড়ি তৈরির কারখানা, কখনও দিনমজুর হিসেবে দিন কাটিয়েছেন তিনি৷ পেনশনের অল্প টাকাতেও কিছু জমাচ্ছেন তিনি। আবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চান। তার ছেলেমেয়ে ও নাতি নাতনিকে যেনো তার মতন কষ্ট করে বাঁচতে না হয় সেই পথই সুগম করে যেতে চান সুলতানা৷