দুপুরে খাওয়ার পর কেন শরীর ঢলে পড়ে? জানুন রক্তে শর্করার ওঠানামা, হজমপ্রক্রিয়া ও জৈব ঘড়ির প্রভাব, সঙ্গে ক্লান্তি দূর করার সহজ উপায়।
দুপুরে ভরপেট খাওয়ার পর অনেকেই ক্লান্ত, ঝিমঝিম বা ঘুমঘুম অনুভব করেন। এটি স্বাভাবিক হলেও, এর পেছনে আছে শরীরের কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন এমন হয় এবং কীভাবে এই ক্লান্তি দূর করা যায়।
রক্তে শর্করার ওঠানামা
ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টিজাতীয় খাবার বা কোমল পানীয় রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। শরীর তখন ইনসুলিন নিঃসরণ করে গ্লুকোজ কমানোর চেষ্টা করে। ফলে রক্তে হঠাৎ শর্করা কমে গিয়ে দেখা দেয় ক্লান্তি, মনোযোগে ঘাটতি ও ঘুমঘুম ভাব।
হজমপ্রক্রিয়ার প্রভাব
ভরপেট খাওয়ার পর শরীরের রক্ত হজমে সাহায্য করতে পেটের দিকে বেশি প্রবাহিত হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ কিছুটা কমে যায়—তখনই আসে সেই বিখ্যাত “দুপুরের ঝিমুনি”।
শরীরের জৈব ঘড়ির ভূমিকা
বেলা ১টা থেকে ৩টার মধ্যে শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দে (সার্কাডিয়ান রিদম) সামান্য ক্লান্তি0 আসে। এটি শরীরের স্বাভাবিক দৈনিক ছন্দেরই অংশ।
কীভাবে কমাবেন দুপুরের ক্লান্তি
১. খাবার শুরু করুন সবজি বা প্রোটিন দিয়ে
ভাত বা রুটির আগে সালাদ, ডাল, ডিম বা মুরগির মাংস খান। এতে রক্তে গ্লুকোজ ধীরে বাড়ে, শক্তি থাকে দীর্ঘক্ষণ।
২. খাবারের পর হাঁটুন
মাত্র ২–৫ মিনিট হাঁটলেই শরীর গ্লুকোজ ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে। এতে রক্তে শর্করা ভারসাম্য থাকে ও ঘুমঘুম ভাব কমে।
৩. পানীয় বেছে নিন সচেতনভাবে
চিনি দেওয়া কোমল পানীয় বা জুস রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বাড়ায়। এর বদলে জল, লেবুজল বা চিনি ছাড়া চা খান।
৪. ফলের সঙ্গে খান প্রোটিন বা চর্বি
আপেলের সঙ্গে বাদাম বা দইয়ের সঙ্গে ফল খান। এতে গ্লুকোজ ওঠানামা কমে।
৫. পরিমাণে নজর দিন
অল্প অল্প করে খেলে হজম সহজ হয়, শরীরও হালকা থাকে, ফলে ক্লান্তি কমে।
সহজ বিজ্ঞানের ভাষায়
খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজ বাড়লে ইনসুলিন সক্রিয় হয়। ইনসুলিন অতিরিক্ত সক্রিয় হলে রক্তে শর্করা দ্রুত কমে যায়—তখনই আসে ক্লান্তি, ঘুম ও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা।
এই ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি আপনি জানেন কখন, কীভাবে ও কতটা খাবেন।
আগামীকালই শুরু করুন এই তিনটি অভ্যাসের যেকোনো একটি
খাবার শুরু করুন সবজি বা প্রোটিন দিয়ে
খাবারের পর ৫ মিনিট হাঁটুন
কোমল পানীয় বাদ দিয়ে পানি বা চা খান
একটি অভ্যাস নিয়মিত মানলেই দুপুরের ক্লান্তি কমে যাবে, শক্তি থাকবে সারাদিন।
দুপুরে যেসব খাবার শক্তি ধরে রাখে
সেদ্ধ ডিম, ডাল, মাছ, দই, বাদাম ও ফল—এসব প্রোটিন, আঁশ ও ভালো চর্বিতে ভরপুর, যা দীর্ঘ সময় শক্তি জোগায়।
যেসব খাবারে বাড়ে ঘুমঘুম ভাব
খাদ্য
Food: প্রতিদিন কয়টি ফল খাওয়া ভালো? জানুন পুষ্টিবিদদের পরামর্শ
চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, অতিরিক্ত ভাত, ভাজাপোড়া ও মিষ্টিজাতীয় খাবার হঠাৎ রক্তে শর্করা বাড়ায়—এরপর দ্রুত কমে গিয়ে শরীর ঢলে পড়ে।
মনে রাখুন:
দুপুরের ক্লান্তি রোগ নয়—এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া। তবে কিছু সহজ খাদ্যাভ্যাস ও সচেতন জীবনযাপনেই আপনি সারাদিন রাখতে পারেন নিজেকে সতেজ ও সক্রিয়।
#HealthTips #Nutrition #PostLunchFatigue #HealthyHabits #BanglaHealth
