বলিউড এবং টেলিভিশন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রয়াত অভিনেতা পঙ্কজ ধীর— টেলিভিশনের ইতিহাসে যিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্রে। ১৫ অক্টোবর তাঁর প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমাজমাধ্যমে শোকের স্রোত বইতে শুরু করে। অনুরাগী থেকে সহকর্মী— সকলেই স্মরণ করছেন তাঁর অনবদ্য অভিনয়, বিশেষত কর্ণের চরিত্রে তাঁর অনন্য উপস্থিতি।
অভিনেতা মুকেশ খন্না, যিনি ‘মহাভারত’-এ ভীষ্ম পিতামহের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, স্মৃতিচারণ করলেন প্রিয় সহ-অভিনেতার। নিজের ভিডিয়ো বার্তায় মুকেশ বলেন, “পঙ্কজের মৃত্যুটা খুবই আকস্মিক। বছর খানেক আগেই নিজের পডকাস্টে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তবে রাজি করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ‘মহাভারত’ বা পুরনো দিন নিয়ে কথা বলতে চাইছিল না ও। শেষে রাজি হয়েছিল। কিছুদিন আগে আবার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন আর ও রাজি হয়নি। তখনই ওর অসুস্থতার কথা জানতে পারি।”
মুকেশের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ‘মহাভারত’-এর শুটিংয়ের দিনগুলো। তিনি জানান, প্রথমে নিজেই কর্ণ বা অর্জুনের চরিত্রে অভিনয়ের আশা করেছিলেন। “ভাবতাম কর্ণ বা অর্জুনের ভূমিকা পাব, কিন্তু ঈশ্বর আমার জন্য রেখেছিলেন ভীষ্মের চরিত্র। আজও সেই চরিত্রেই আমি বেঁচে আছি। এরপর কর্ণের রূপে দেখা গেল পঙ্কজকে— আর ও দুর্দান্ত কাজ করেছিল,” বলেন মুকেশ।
তবে আশ্চর্যের বিষয়, পঙ্কজ নাকি কখনও পুরো ‘মহাভারত’ পড়েননি। বরং তিনি পড়েছিলেন কর্ণের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘মৃত্যুঞ্জয়’। মুকেশ বলেন, “ও ভাবত বি আর চোপড়ার ‘মহাভারত’-এ কর্ণের অনেক দিক তুলে ধরা হয়নি। আমি মজা করে ওকে বলতাম— কনভেন্টে পড়া পাণ্ডব! কিন্তু অভিনয়ে ও ছিল অসাধারণ।”
অভিনয় জীবনের আগে পঙ্কজ ধীরের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সহকারী পরিচালক হিসেবে। মুকেশ জানান, “আমার প্রথম ছবি ‘রুহি’-তে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিল ও। তখন মাসে মাত্র ৩০০ টাকা বেতন পেত। তবু কী নিষ্ঠা আর পরিশ্রম ছিল ওর মধ্যে!”
চলচ্চিত্র-পরিবারে জন্ম হলেও, নিজের জায়গা পোক্ত করতে পঙ্কজকে লড়াই করতে হয়েছিল দীর্ঘদিন। তবে ‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্র তাঁকে এনে দিয়েছিল অমরত্ব। আজ তিনি আর নেই, কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কর্ণ আজও জীবন্ত— এক দৃঢ়, বেদনাময়, অথচ মহিমান্বিত চরিত্রের প্রতীক হিসেবে।