ভোরবেলা স্কুলবাস ধরার তাড়াহুড়ো। রাতে দস্যিপনা করে দেরিতে ঘুমোনো—এই দুই মিলিয়ে অনেক খুদেই সকালে কিছু না খেয়েই স্কুলে চলে যায়। ফলে শরীরে দেখা দেয় পুষ্টির অভাব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আর দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এ অবস্থায় খুদের টিফিন বক্সই হতে পারে পুষ্টির ভরসাস্থল—যেখানে থাকবে মায়ের জাদুর ছোঁয়া, আকর্ষণীয় সাজ, আর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ।
শিশুরা স্বভাবতই খাবারের স্বাদ, রঙ ও চেহারার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার দিলেই হবে না—তা দেখতে সুন্দর ও মুখরোচক হতে হবে। একটু অভিনবত্ব আর সৃজনশীলতা থাকলে খুদের টিফিন খাওয়ার আগ্রহও বাড়ে। নিচে আছে এমন কিছু সহজ, পুষ্টিকর ও আকর্ষণীয় টিফিন আইডিয়া, যা খুব অল্প সময়ে তৈরি করা যায়।
১. রঙিন সবজির স্যান্ডউইচ: দেখতেই লোভনীয়, খেতেও সুস্বাদু
সবজির স্যান্ডউইচ শিশুদের জন্য আদর্শ। এতে যেমন থাকে গাজর, ক্যাপসিকাম, টমেটোর মতো ভিটামিনসমৃদ্ধ সবজি, তেমনই গ্রিল করার ফলে এর স্বাদও হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। শুধু ব্রেড, সামান্য মেয়োনিজ-সস আর গ্রেট করা সবজি—এই তিনেই তৈরি হয় মুখরোচক পুষ্টিকর স্ন্যাকস। গ্রিল করলে ব্রেড ক্রিসপি হয়, যা খুদে আরও আগ্রহ নিয়ে খায়। টিফিন বক্স খোলার আগেই সুস্বাদু গন্ধে মন ভরে যাবে।
২. রুটি রোল: শুকনো রুটির সেরা রূপ
অনেক খুদেই রুটি খেতে চায় না, কিন্তু রোলের নাম শুনলেই খুশি হয়ে যায়। ঘরে তৈরি রুটির মধ্যে আলু আর গ্রেট করা সবজির পুর ভরে রোল বানালে একটি সম্পূর্ণ খাবার তৈরি হয়। এতে থাকে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন আর ফাইবার—যা খুদেকে সক্রিয় রাখে। টিফিনে রুটি রোল দিলে তা খেতে যেমন সহজ, তেমনই বহন করতেও সুবিধা।
৩. ওটস চিলা: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে উপকারী
ওটস হচ্ছে উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, যা ছোটদের হজমশক্তি উন্নত করে। টকদই, গ্রেট করা পেঁয়াজ-গাজর আর সামান্য নুন মিশিয়ে বানানো ওটস চিলা খেতে যেমন নরম, তেমনই পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। সঙ্গে একটু সস বা ধনেপাতার চাটনি দিলে স্বাদ আরও বাড়ে। যেসব খুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর টিফিন।
৪. কর্ন স্যালাড: মুখরোচক এবং হালকা পুষ্টিকর মধ্যাহ্ন খাবার
বেবি কর্নের সঙ্গে শশা, গাজর, পেঁয়াজ কুঁচি মেশানো স্যালাড অত্যন্ত পুষ্টিকর। লেবুর রস আর সামান্য চাটমশলা দিলে এই স্যালাড আরও লোভনীয় হয়ে ওঠে। কর্নে রয়েছে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা খুদের পেশি, হাড় আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সাহায্য করে। যারা ভারী খাবার খেতে চায় না, তাদের জন্য এটি আদর্শ।
৫. ফ্রুট স্যালাড: খুদের ফলের প্রতি অনীহা কাটাতে উপায়
ফল দেখলে অনেক খুদেই নাক সিঁটকোলেও জিভে জল আনা ফ্রুট স্যালাডে তাদের মন গলে যায়। মৌসুমি ফল কেটে তাতে অল্প চাটমশলা ছিটিয়ে দিলেই তৈরি হয় স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু টিফিন। এতে থাকে প্রাকৃতিক ভিটামিন, পানি ও মিনারেল—যা খুদেকে সারাদিন চনমনে রাখে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
শেষকথা
মায়ের একটু যত্ন আর সৃজনশীলতায় খুদের টিফিন বক্স হয়ে উঠতে পারে পুষ্টির ভাণ্ডার। টিফিন যত রঙিন ও আকর্ষণীয় হবে, খুদেও তত উৎসাহ নিয়ে খাবে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে তাদের শারীরিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পড়াশোনায় মনোযোগ—সবই বাড়বে। তাই প্রতিদিনের টিফিনে থাকুক মায়ের স্পেশাল টাচ, আর খুদে হয়ে উঠুক সুস্থ-সবল ও প্রাণবন্ত।
আরও পড়ুন
ত্বকের যৌবন ফেরাতে ঘি: বলিরেখা কমাতে ঘরোয়া ব্যবহারের সম্পূর্ণ গাইড
