ঘি মানেই ওজন বাড়ার ভয়—এ ধারণা বহু মানুষের মনেই রয়ে গিয়েছে। ওজন কমানোর ডায়েট শুরু হলেই অনেকেই প্রথমে বাদ দেন ঘি। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে এই ধারণা ভুল। ঘি শুধু যে স্বাদ বাড়ায় তা নয়, শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী—অবশ্যই যদি তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়।
পরিমিত ঘি কেন উপকারী?

পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ জানান, ঘি শরীরের কোষ থেকে ফ্যাট-সলিউবল টক্সিন বের করে দেয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক। ঘি হজমে সাহায্য করে এবং শরীরে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাটকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়েটে সামান্য ঘি থাকলে ওজন বাড়ে না, বরং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, রিফাইন্ড তেল বা জাঙ্ক ফুডের তুলনায় অল্প ঘি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তিনি বলেন, তেলে ভাজা খাবারের বদলে ঘরে অল্প ঘি দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে হজমে সুবিধা হয় ও শরীরও ভালো থাকে। এমনকি রুটি বা পরোটায় অল্প ঘি মাখিয়ে খেলে খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমে, ফলে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়।
কোলেস্টেরলেও ইতিবাচক প্রভাব

ঘি সাধারণ ধারণার মতো খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় না। বরং শরীরে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) কমিয়ে HDL (ভাল কোলেস্টেরল) বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই হার্টের সমস্যা বা কোলেস্টেরল না থাকলে খাবারের তালিকায় অল্প ঘি রাখলে কোনও ক্ষতি হয় না।
দিনে কতটা ঘি নিরাপদ?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানান—
* প্রতিদিনের মোট ক্যালোরির ২০–৩৫% আসা উচিত ফ্যাট থেকে।
* তার মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১০% এর কম থাকলে তা শরীরের ক্ষতি করে না।
এক চামচ ঘিতে থাকে প্রায় ১৫ গ্রাম ফ্যাট, যার মধ্যে ৯ গ্রাম স্যাচুরেটেড। সে হিসাবে দিনে ১–২ চামচ ঘি নিরাপদ এবং উপকারী।
কোন ঘি খাবেন?
বাজারে অনেক সময় বনস্পতি ও কৃত্রিম সুগন্ধ মিশিয়ে ‘দেশি ঘি’ নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়। এমন ঘি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই—
* ঘিতে যদি কৃত্রিম গন্ধ থাকে, এড়িয়ে চলুন
* ঘরে ঘি বানালে সবচেয়ে ভালো
* বাইরে কিনলে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বা নির্ভরযোগ্য উৎস বেছে নিন
রান্নায় ঘি ব্যবহারের সুবিধা
ঘি দিয়ে রান্না করলে এর ভিটামিন ও খনিজ খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়, ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—
ঘিয়ের রাসায়নিক গঠন সহজে ভেঙে যায় না, তাই উচ্চ তাপেও ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয় না। এই বিশেষত্বের কারণে ঘি রান্নায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর।
উপসংহার
সঠিক পরিমাণে ঘি খেলে ওজন বাড়ে না, বরং শরীরের পক্ষে তা উপকারী—এই মতেই একমত বিশেষজ্ঞরা। তাই ডায়েট থেকে ঘি পুরোপুরি বাদ দেওয়াই সমাধান নয়। বরং দিনে ১–২ চামচ মানসম্মত ঘি খেলে হজম ভালো থাকে, কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং শরীর শক্তি পায়।
আরও পড়ুন

অর্থাৎ—
গোলমাল ঘিতে নয়, ভুল ব্যবহারে। সঠিক পরিমাণ জানলে ঘি আপনার ডায়েটের বন্ধু।
আরও পড়ুন
শীতকালে সঠিক পরিমাণে জল খাওয়ার গুরুত্ব এবং তার উপকারিতা