২০২৫ সালের মে মাস—অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের আকস্মিক বিমান হামলা রুখে দিতে ভারতীয় সেনার অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের হানা ব্যর্থ করে দেয় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর পরেই ভারত সরকার রাশিয়া থেকে আরও পাঁচটি এস-৪০০ রেজিমেন্ট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই প্রেক্ষাপটে সামনে উঠছে আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবস্থার সম্ভাবনা—এস-৪০০-এর উত্তরসূরি এস-৫০০ প্রমিথিউস। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন ভারত সফরকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পেয়েছে এই আলোচনা। রিপোর্ট বলছে, সফরের সময় এস-৫০০ কেনার সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে কথা হতে পারে, যদিও এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির এস-৫০০
এস-৫০০-কে কেবল এস-৪০০-এর আপগ্রেড নয়, বরং সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি শুধু বিমান, ড্রোন বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নয়, বরং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) ও হাইপারসনিক গ্লাইড অস্ত্র ধ্বংস করতেও সক্ষম—এমনটাই দাবি রাশিয়ার আলমাজ-অ্যান্টে সংস্থার।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারতের ডিআরডিও, ভারত ডায়নামিক্স, এল অ্যান্ড টি, টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমসের মতো সংস্থাগুলি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে এস-৫০০-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাব-সিস্টেম ভারতে তৈরি করতে পারে। ফলে এটি ভবিষ্যতে ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি বড় মাইলফলক হিসেবে উঠে আসতে পারে।
এস-৪০০ ও এস-৫০০-এর মূল পার্থক্য
দুটি সিস্টেমই আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর কার্যকর, তবে সক্ষমতা ও বিস্তার ক্ষেত্রে এস-৫০০ অনেক এগিয়ে।
রেঞ্জ:
এস-৪০০: ৪০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম
এস-৫০০: ৫০০–৬০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুও ধ্বংস করতে পারে
উচ্চতা:
এস-৪০০: সর্বোচ্চ ৩০ কিমি উচ্চতায় কার্যকর
এস-৫০০: প্রায় ১৮০–২০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম—যা মহাকাশের সীমানার কাছাকাছি
লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের ক্ষমতা:
এস-৪০০: ফাইটার জেট, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র
এস-৫০০: উপরের সবকিছুর পাশাপাশি ICBM ও হাইপারসনিক অস্ত্র ধ্বংসের ক্ষমতা রয়েছে
এই বৈশিষ্ট্যগুলিই এস-৫০০-কে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে পরিণত করেছে।
এখনও চূড়ান্ত নয় চুক্তির সম্ভাবনা
পুতিনের সফরে এস-৫০০ নিয়ে আলোচনা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনও চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে বিভিন্ন রিপোর্ট। ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘদিনের হলেও, এত উন্নত প্রযুক্তির যৌথ নির্মাণ ও হস্তান্তর একটি জটিল প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন
WhatsApp Web–এ বড় পরিবর্তন, বাধ্যতামূলক নতুন নিয়ম
বাণিজ্য বৈঠকেও গুরুত্ব
এবারের সফরে শুধু প্রতিরক্ষা নয়—ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করাও অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ইন্ডিয়া-রাশিয়া বিজনেস ফোরাম।
রাশিয়ার সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যে আলোচনা চলবে। পাশাপাশি, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, বিশেষ করে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
মোবাইলে বাধ্যতামূলক সঞ্চার সাথী: গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কায় তীব্র বিতর্ক
উপসংহার
এস-৫০০ নিয়ে আলোচনার সূচনা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। যদিও এখনই চুক্তি না-ও হতে পারে, তবু বোঝাই যাচ্ছে—ভারত-রাশিয়া কৌশলগত সম্পর্ক আগামী দিনে আরও গভীর হতে চলেছে। পুতিনের সফরে সে দিকেই নজর গোটা বিশ্বের।
আরও পড়ুন
শিয়ালদা ডিভিশনে নতুন এসি লোকাল পরিষেবা, রুট ও সময়সূচি