বলিউডের ইতিহাসে প্রেম, বেদনা ও অসমাপ্ত আকাঙ্ক্ষার যে কয়েকটি গল্প চিরকাল আলোচিত, সঞ্জীব কুমার ও সুলক্ষণা পণ্ডিতের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে তার মধ্যে অন্যতম। ভাগ্যের পরিহাস—যে তারিখে ১৯৮৫ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন অভিনেতা সঞ্জীব কুমার, ঠিক সেই ৬ নভেম্বর-এই ২০২৪ সালে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন তাঁর অপ্রাপ্ত প্রেম সুলক্ষণা পণ্ডিত। এ যেন দুই ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার এক অদ্ভুত, মহাজাগতিক সংযোগের পরিসমাপ্তি।
প্রথম ছবিতেই প্রেম—সুলক্ষণার হৃদয়ে সঞ্জীব কুমার
গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও সুলক্ষণা পণ্ডিত বড় পর্দায় পা রাখেন সাসপেন্স থ্রিলার ছবি ‘উলঝান’ (১৯৭৫)-এ, যেখানে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সঞ্জীব কুমার। ছবির শুটিং চলাকালীনই তিনি গভীরভাবে প্রেমে পড়েন এই প্রতিভাবান অভিনেতার।
তবে সেই সময় সঞ্জীব নিজেই ছিলেন প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো এক হৃদয়বিদারিত মানুষ। নায়িকা হেমা মালিনীর প্রতি তাঁর ভালোবাসা সাড়া পায়নি। সেই যন্ত্রণার কথা বলার সঙ্গী ছিলেন সুলক্ষণা। তাঁর আবেগের স্রোতে ভেসে সুলক্ষণা নীরবে, নিঃশব্দে প্রেমে পড়ে যান সঞ্জীবের।
অপ্রাপ্ত প্রেমের দীর্ঘ ছায়া
সঞ্জীব কুমারের হৃদয়ে তবে স্থান করে নিতে পারেননি সুলক্ষণা। হেমার প্রতি তাঁর একতরফা ভালোবাসা ও পরবর্তী মানসিক ভাঙন তাকে মদ্যপানের দিকে ঠেলে দেয়। পরে হার্ট অ্যাটাকের পর আমেরিকায় বাইপাস সার্জারি করাতে হয় তাঁকে।
ভারতে ফিরে আসার পর সুলক্ষণা আশা করেছিলেন, দীর্ঘদিনের সঙ্গ আর যত্ন হয়তো সঞ্জীবকে তাঁর দিকে টেনে আনবে। তাই একদিন মন্দিরে নিয়ে তিনি বিয়ের প্রস্তাবও দেন। কিন্তু সঞ্জীব কুমার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
তবুও সুলক্ষণা সরে যাননি। তিনি পাশে ছিলেন—বন্ধু, সহচর, নীরব প্রেমিকা হিসেবে।
সঞ্জীবের মৃত্যু, ছিন্নভিন্ন সুলক্ষণা
১৯৮৫ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে সঞ্জীব কুমারের অকালে মৃত্যু সুলক্ষণাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। গভীর অবসাদে ডুবে যান তিনি। এর পরপরই তাঁর মায়ের মৃত্যু জীবনের আরেকটি বড় আঘাত হয়ে আসে। মানসিক বিপর্যয় ও দীর্ঘ অসুস্থতা তাঁকে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন—
“এই মৃত্যুগুলো আমাকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।”
২০০৬ সালে তাঁর বোন বিজয়তা পণ্ডিত ও ভগ্নিপতি আদেশ শ্রীবাস্তব তাঁকে নিজের কাছে এনে মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিছুটা উন্নতি হলেও অতীতের ট্রমা তাঁর জীবনকে ছায়ার মতো তাড়া করে বেড়াত।
সংগীত পরিবারে জন্ম, প্রতিভায় শৈশব থেকেই উজ্জ্বল
শেষ যাত্রা—আবারও সেই ৬ নভেম্বর২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সুলক্ষণা পণ্ডিত। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। ভাই ললিত পণ্ডিত খবরটি নিশ্চিত করেন।
কাকতালীয় নাকি মহাজাগতিক ঘটনা—সঞ্জীব–সুলক্ষণা প্রেম কাহিনির শেষ পাতা যেন নিজেই লিখে দিল ভাগ্য।
একই তারিখে, কয়েক দশকের ব্যবধানে, শেষ হলো এক অসমাপ্ত প্রেমের দুই অধ্যায়।
FAQ
১) প্রশ্ন: সুলক্ষণা পণ্ডিত কবে মারা যান?
উত্তর: ৬ নভেম্বর ২০২৪ সালে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তিনি মারা যান।
২) প্রশ্ন: সঞ্জীব কুমারের মৃত্যুদিন কোন তারিখে?
উত্তর: ৬ নভেম্বর ১৯৮৫। ঠিক ওই দিনই সুলক্ষণা পণ্ডিতও প্রয়াত হন।
৩) প্রশ্ন: সুলক্ষণা ও সঞ্জীব প্রথম কোথায় পরিচিত হন?
উত্তর: ১৯৭৫ সালের ছবি ‘উলঝান’–এর শ্যুটিং সেটে।
৪) প্রশ্ন: সুলক্ষণা কবে সঞ্জীব কুমারের প্রেমে পড়েন?
উত্তর: ‘উলঝান’ ছবির শ্যুটিং চলাকালীনই তিনি সঞ্জীবের প্রেমে পড়েন।
৫) প্রশ্ন: কেন সুলক্ষণার প্রেম অপ্রাপ্ত রয়ে যায়?
উত্তর: সঞ্জীব কুমারের মনের গভীরে হেমা মালিনীর প্রতি প্রেম ছিল, যা তিনি ভুলতে পারেননি।
৬) প্রশ্ন: সঞ্জীব কুমার কি সুলক্ষণার বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: না, তিনি মন্দিরে নিয়ে যাওয়া সুলক্ষণার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
৭) প্রশ্ন: সঞ্জীব কুমারের মৃত্যুর পর সুলক্ষণা কী মানসিক অবস্থায় ছিলেন?
উত্তর: তিনি গভীর অবসাদে ডুবে যান এবং দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন।
৮) প্রশ্ন: সুলক্ষণা পণ্ডিত কোন পরিবার থেকে এসেছিলেন?
উত্তর: হরিয়ানার হিসারের বিখ্যাত সংগীত পরিবার থেকে; পণ্ডিত জসরাজ ছিলেন তাঁর কাকা।
৯) প্রশ্ন: সুলক্ষণার জনপ্রিয় গান কোনগুলো?
উত্তর: ‘বেকরার দিল টুট গ্যায়া’, ‘বান্ধি রে কহে প্রীত’, ‘সোমবার কো হাম মিলে’ প্রভৃতি গান জনপ্রিয়।
১০) প্রশ্ন: মৃত্যুকালে সুলক্ষণার বয়স কত ছিল?
উত্তর: মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
#BollywoodNews #CelebrityTribute #UnfinishedLoveStory

