ওরেগনে মেটার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন ফেসবুক কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। অভিযোগ—ভুল নীতিমালায় পেজ বন্ধ, বকেয়া অর্থ আটকে রাখাসহ সাপোর্টের ঘাটতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের একটি আদালত এখন ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা এবং একদল কনটেন্ট ক্রিয়েটরের মধ্যে নজিরবিহীন আইনি লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল। মামলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ডলার। মূল অভিযোগ—ভুলভাবে পেজ মনিটাইজেশন বন্ধ ও বকেয়া অর্থ আটকে রাখা।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন সাবেক ফটোজার্নালিস্ট এবং জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ পরিচালনাকারী মেল বুজাদ। আট বছর ধরে প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। অ্যালগরিদম বুঝে পোস্ট ভাইরাল করার দক্ষতার ফলে কখনও মাসে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেছেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার ১২টি পেজ মিলিয়ে বোনাস আয় হয়েছিল ৬৮ হাজার ডলার।
কিন্তু হঠাৎই মেটা তার পাঁচটি পেজের মনিটাইজেশন বন্ধ করে দেয়। কারণ দেখানো হয়—বুজাদের অ্যাকাউন্ট নাকি মাল্টায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে ফেসবুকের আর্থিক সুবিধা প্রযোজ্য নয়। অথচ বুজাদ যুক্তরাষ্ট্রেই থাকেন এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংক ব্যবহার করেন। তার দাবি, “আমি মাল্টা কখনোই যাইনি।”
২০টিরও বেশি সাপোর্ট টিকিট দেওয়ার পরও সমাধান না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথম মামলার নোটিশ পেয়ে মেটা তার পেজ চালু করে এবং বকেয়া অর্থ দেয়। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে আরও ছয়টি মামলা করেন তিনি। অভিযোগ—৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ মেটা আটকে রেখেছে।
বুজাদ একা নন; আরও বহু কনটেন্ট ক্রিয়েটর একই অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, মেটার সাপোর্ট সিস্টেম এখন প্রায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। ভুলভাবে ‘লিমিটেড অরিজিনালি অফ কনটেন্ট’, ‘ইনয়েলিজিবল কান্ট্রি’ বা ট্যাক্স তথ্যগত সমস্যার অজুহাতে পেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি “মেটা ভেরিফায়েড” সাপোর্টের জন্য অর্থ দিয়েও কোনো বাস্তব সহায়তা পাওয়া যায় না।
এক নির্মাতা জানিয়েছেন, তার বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। কারও অভিযোগ আবার—মেটা শুধু পুরনো কাগজপত্র পাঠাচ্ছে, কিন্তু অর্থ ফেরত দিচ্ছে না।
বুজাদ শুধু নিজের জন্য নয়, আরও ২৫ জন নির্মাতার দাবি নিয়েও মামলা করেছেন। তিনি জানান, নির্মাতারা “অ্যাসাইনমেন্ট অব ক্লেইমস” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে আইনি প্রতিনিধিত্বের অধিকার দিয়েছেন। তবে মেটা বলছে, তাদের নীতিমালায় অন্যের কাছে অধিকার হস্তান্তর নিষিদ্ধ।
এ পর্যন্ত বুজাদ ৩২টি মামলা করেছেন—৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে, ৯টি খারিজ, ১৫টি এখনো বিচারাধীন। আদালত সম্প্রতি এই সব মামলাকে একীভূত করে ১১৫,০০০ ডলার দাবির একক মামলায় পরিণত করেছে।
বুজাদের ভাষায়, “মেটা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। অস্পষ্ট অভিযোগে পেজ বন্ধ করে, অর্থ আটকে রাখে, আপিল উপেক্ষা করে। আমরা শুধু চাই ন্যায্য বকেয়া ফেরত দিক এবং পেজগুলো ঠিক করে দিক।”
FAQ
1. প্রশ্ন: মামলাটি কোথায় চলছে?
উত্তর: যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের একটি আদালতে।
2. প্রশ্ন: মূল অভিযোগ কী?
উত্তর: ভুল নীতিমালা ব্যবহার করে পেজের মনিটাইজেশন বন্ধ এবং বকেয়া অর্থ আটকে রাখা।
3. প্রশ্ন: মেল বুজাদ কে?
উত্তর: গেটি ইমেজেসের সাবেক ফটোজার্নালিস্ট ও জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ নির্মাতা।
4. প্রশ্ন: তার কতগুলো পেজ ছিল?
উত্তর: মোট ১২টি পেজ।
5. প্রশ্ন: তিনি সর্বোচ্চ কত আয় করেছিলেন?
উত্তর: কিছু মাসে ১০–২০ হাজার ডলার পর্যন্ত, আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বোনাস আয় ৬৮ হাজার ডলার।
6. প্রশ্ন: মেটা তার পেজ কেন বন্ধ করেছিল?
উত্তর: অভিযোগ—তিনি নাকি মাল্টায় বসে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন।
7. প্রশ্ন: বুজাদ কি মাল্টায় গিয়েছিলেন?
উত্তর: তার দাবি—কখনও যাননি।
8. প্রশ্ন: আদালতে প্রথম মামলায় কী হয়েছিল?
উত্তর: নোটিশ পাওয়ার পর মেটা তার পেজ পুনরায় চালু করে এবং বকেয়া অর্থ দেয়।
9. প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত বুজাদ কতটি মামলা করেছেন?
উত্তর: মোট ৩২টি।
10. প্রশ্ন: মেটা কি এই অভিযোগ স্বীকার করেছে?
উত্তর: না, তারা তাদের টার্মস অব সার্ভিস অনুযায়ী অধিকার হস্তান্তর নিষিদ্ধ বলছে।
11. প্রশ্ন: মামলার মোট দাবি কত?
উত্তর: ১ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।
12. প্রশ্ন: কয়টি মামলা এখনো বিচারাধীন?
উত্তর: ১৫টি।
13. প্রশ্ন: অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর কী অভিযোগ করেছেন?
উত্তর: ভুলভাবে পেজ বন্ধ, বকেয়া অর্থ আটকে রাখা, সাপোর্ট না পাওয়া।
14. প্রশ্ন: তাদের বকেয়ার পরিমাণ কত?
উত্তর: ১০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি।
15. প্রশ্ন: মেটা ভেরিফায়েড সাপোর্ট কি সহায়তা দিয়েছে?
উত্তর: অভিযোক্তাদের দাবি—না।
16. প্রশ্ন: মেটার সাপোর্ট সিস্টেম কেমন?
উত্তর: প্রায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়; মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
17. প্রশ্ন: ‘ইনয়েলিজিবল কান্ট্রি’ সমস্যা কী?
উত্তর: ভুলভাবে এমন দেশ দেখানো যেখানে মেটার অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায় না।
18. প্রশ্ন: বুজাদের পেজে কি কোনো নীতিমালা ভঙ্গ ছিল?
উত্তর: তার দাবি—না, অভিযোগ ছিল ভুল।
19. প্রশ্ন: আদালত কেন মামলাগুলো একীভূত করেছে?
উত্তর: একই পক্ষ ও একই ধরনের অভিযোগ হওয়ায় একটি বড় মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে।
20. প্রশ্ন: মামলার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: বকেয়া অর্থ ফেরত পাওয়া এবং পেজগুলো স্বাভাবিকভাবে চালুর নিশ্চয়তা।
