আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির আগের রাতেই ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় আগুন, তল্লাশি ও সেনা-পুলিশের টহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি শুরুর আগের রাতেই রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্তত পাঁচটি স্থানে ধারাবাহিক আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশজুড়ে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত কমলাপুর, মিরপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরে একাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ছয় স্থানে অগ্নিসংযোগ
রাত পৌনে তিনটার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি হিউম্যান হলার বা লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়।
এর আগে রাত সোয়া ১২টার দিকে মিরপুর ১২ নম্বর ডিওএইচএসের পল্লবী থানার পাশে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রাত আড়াইটার দিকে টাঙ্গাইলের রাওয়াইল এলাকায় একটি বাসে, সাড়ে তিনটার পর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আকিজ পেপার মিলের সামনে একটি ট্রাকে, এবং ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জে গণপূর্ত কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপ ও পাজেরো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
একই সময়ে শরীয়তপুরের নাউডোবা গোলচত্ত্বরে একটি ট্রাকেও আগুন লাগানো হয়।
সকাল থেকে বন্ধ রাজধানী, রাস্তায় কড়াকড়ি নিরাপত্তা
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার পর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ফার্মগেট ও শিয়া মসজিদ এলাকায় কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি।
শুধুমাত্র অল্প কিছু রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহীদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা, রাস্তায় দলীয় কর্মীরা
বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
তাদের অনেকেই ছোট ছোট দলে অবস্থান ও ঝটিকা মিছিল করছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
ইতিমধ্যে বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, স্থগিত ক্লাস ও পরীক্ষা
রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
বুধবার রাতেই অনেক প্রতিষ্ঠান নোটিশ দিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
একইদিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণা
বৃহস্পতিবারই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (ICT) জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার কথা রয়েছে।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বাড়তি নিরাপত্তা ও ঢাকায় কঠোর নজরদারি
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে বৃহৎ সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে, এবং প্রবেশপথে চলছে কড়া তল্লাশি ও নজরদারি।
দেশজুড়ে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানী কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, এবং জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
উপসংহার
রাজনৈতিক অস্থিরতা, আগুন ও নিরাপত্তা কড়াকড়ির এই আবহে ঢাকার পরিস্থিতি অন্তত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।
সব পক্ষের দাবি—“দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
