শরীরের ত্বক, চুল ও নখের সৌন্দর্য রক্ষার পেছনে অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কোলাজেন। এই প্রোটিন আমাদের টিস্যুকে মজবুত রাখে এবং ত্বকে স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক কোলাজেন উৎপাদন কমতে থাকে। এর ফলে ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা, ঝুলে পড়া, শুষ্কতা, উজ্জ্বলতা হারানোসহ নানা সমস্যা।
তবে খাবারের সঠিক নির্বাচন শরীরের ভেতরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু বিশেষ খাবার রাখলে ত্বক আবার ফিরে পেতে পারে তার প্রাকৃতিক জৌলুস। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি খাবার সম্পর্কে—
১. সাইট্রাস জাতীয় ফল — ভিটামিন সি-র শক্তিশালী উৎস
কমলালেবু, লেবু, আঙুর, কিউই—এসব সাইট্রাস ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা কোলাজেন উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান। ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন গঠনের প্রক্রিয়া সক্রিয় করে এবং ত্বকের টিস্যুকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত সাইট্রাস ফল খেলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যকর ও লাবণ্যময়।
২. বেরি — অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি-র খনি
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরির মতো রঙিন বেরিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং কোলাজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে। যারা ত্বককে স্বাস্থ্যবান ও ঝলমলে রাখতে চান, তারা নিয়মিত বেরি খেলে দ্রুত উপকার পাবেন।
৩. সামুদ্রিক খাবার — ওমেগা–৩-এর মাধ্যমে কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়ক
স্যামন, টুনা, চিংড়ির মতো সামুদ্রিক মাছ ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এই স্বাস্থ্যকর চর্বি ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং কোষ পুনর্গঠনকে উদ্দীপিত করে, যা কোলাজেন তৈরির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা–৩ ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখে, ফলে ত্বক হয় আরও মোলায়েম ও টানটান।
৪. সবুজ শাকসব্জি — ভিটামিন এ, সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
পালং শাক, কলমি শাকসহ সব ধরণের পাতাযুক্ত সবজি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এসব সবজিতে থাকে ভিটামিন সি—যা কোলাজেন উৎপাদনে অপরিহার্য, এবং ভিটামিন এ—যা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে। এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমূহ ত্বকের ক্ষয় কমায় এবং ত্বককে করে আরও উজ্জ্বল।
৫. দই ও ফারমেন্টেড খাবার — প্রোবায়োটিকের মাধ্যমে অন্ত্র সুস্থ রাখে
সুস্থ ত্বকের মূল চাবিকাঠি হলো সুস্থ অন্ত্র। দইসহ ফারমেন্টেড খাবারে থাকা প্রোবায়োটিক হজমশক্তি ঠিক রাখে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। পুষ্টির সঠিক শোষণ হলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলে ত্বকের টেক্সচার উন্নত হয় এবং ত্বক হয় টানটান।
৬. ডিম — প্রোলিন ও বায়োটিনে সমৃদ্ধ
ডিমের সাদা অংশে রয়েছে প্রোলিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা কোলাজেন তৈরির জন্য সরাসরি প্রয়োজন। অন্যদিকে ডিমের কুসুমে থাকা বায়োটিন চুল, ত্বক ও নখকে মজবুত রাখে। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডিম রাখলে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই পায় অতিরিক্ত পুষ্টি ও জেল্লা।
আরও পড়ুন
ধীরে চলার বার্তা: সংখ্যাতত্ত্বে এই সপ্তাহের ভাগ্যফল (৮–১৪ ডিসেম্বর)
শেষ কথা
কোলাজেন কোনও জাদুকরী উপাদান নয়, তবে এটি ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। বয়স বাড়লেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস কোলাজেন উৎপাদনকে সক্রিয় রাখতে পারে, যা আপনাকে দেয় তরুণ ও উজ্জ্বল ত্বক। নিয়মিত খাবারের মধ্যে সাইট্রাস ফল, বেরি, সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাক, দই ও ডিম রাখলে শরীর ভেতর থেকেই ত্বককে সুন্দর করে তুলবে।