বিহারের এক ছোট শহরের সাধারণ এক যুবক। নেই বড় কোনও ডিগ্রি, নেই শহরে চাকরির অভিজ্ঞতা। তবুও তিনি তৈরি করেছেন ৪০০ কোটির ব্যবসা। তাঁর নাম দিলখুশ কুমার, জনপ্রিয় ট্যাক্সি-অ্যাগ্রিগেটর Rodbez–এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। কঠিন বাস্তব, অনাহারের চাপ, সমাজের তুচ্ছতাচ্ছিল্য—সবকিছুকে পিছনে ফেলে তিনি দেখিয়েছেন, সত্যিকারের সাফল্যের জন্য ডিগ্রি নয়, লাগে সাহস, অনুসন্ধানী মন আর সমস্যা সমাধানের ইচ্ছা।
চাকরির লাইনে ফিরিয়ে দেওয়া—তারপরই বদলাল জীবন
হাতে মাত্র উচ্চ-মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট। রোজগারের তাগিদে একসময় দাঁড়িয়েছিলেন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের লাইনে। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যে ঘটনা অনেককে হতাশ করত, সেটাই উল্টে দিল দিলখুশের জীবন। অপমান নয়—এটাই হয়ে উঠল তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
অটো চালিয়ে বুঝলেন যাত্রীদের আসল সমস্যা
পেটের দায়ে নেমে পড়েন অটো চালাতে। আর সেখানেই তিনি উপলব্ধি করেন—দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সাধারণ মানুষের কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী ট্যাক্সি পরিষেবা তখন বিহারে প্রায় অনুপস্থিত। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়াই ছিল ঝক্কির।
এই সমস্যার বাস্তব চিত্র নিজ চোখে দেখেই তাঁর মাথায় আসে একটি বড় ভাবনা—
নিজের গাড়ি নয়, বরং যাত্রীদেরকে বিশ্বাসযোগ্য ড্রাইভারদের সঙ্গে যুক্ত করার একটি প্ল্যাটফর্ম।
জন্ম Rodbez: মাত্র ২০২১ সালেই শুরু হয় যাত্রা
২০২১ সালে লঞ্চ করেন Rodbez নামের অ্যাপ। শুরুটা ছিল সামান্য পুঁজি দিয়ে, কিন্তু ভাবনা ছিল বড়। আর সেই ভাবনাকেই মূল্য দেন বিনিয়োগকারীরা—প্রথম রাউন্ডেই তিনি পান ৪০ লক্ষ টাকা ফান্ডিং।
Rodbez খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল দিলখুশের সাহসী প্রতিশ্রুতি—
ড্রাইভারের ভুলে যদি যাত্রী ফ্লাইট মিস করেন, তাহলে কোম্পানি নতুন টিকিট বুক করে দেবে।
বিহারে এরকম নিশ্চয়তা আগে কেউ দেয়নি। ফলে Rodbez খুব দ্রুত গ্রাহকদের বিশ্বাস জয় করে নেয়।
হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, ১০০ কোটির টার্নওভার
কয়েক বছরের মধ্যেই Rodbez শুধু পরিবহণ ব্যবসায় নয়, বিশাল কর্মসংস্থানের উৎসে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ আজ এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন।
কোম্পানির টার্নওভার ইতিমধ্যেই ছুঁয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে দিলখুশ কুমার-এর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
সাফল্যের বার্তা: পেটে খিদে আর মনে ইচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়
দিলখুশ কুমারের সাফল্য প্রমাণ করে—
বড় ডিগ্রি না থাকলেও চলবে
অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলবে
দরকার শুধু সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষমতা
এবং সেই সমস্যার সমাধানে দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেওয়ার মন
আরও পড়ুন
বিয়েতে উপহারে বিরাট করছাড়! জানুন পুরো নিয়মকানুন
বিহারের এক সাধারণ অটোচালকের এই অসাধারণ উদ্যোগ ভারতীয় স্টার্টআপ বিশ্বের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তাঁর গল্প বলছে—স্বপ্ন যদি সত্যি করে বাঁচে, তাহলে যেকোনো পথেই সফলতা সম্ভব।
