বিজয় দিবসের দিন ভারতীয় নৌসেনার ইতিহাসে যুক্ত হতে চলেছে এক নতুন অধ্যায়। আগামী ১৬ ডিসেম্বর দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত অভিনব জলযান ‘ডাইভিং সাপোর্ট ক্রাফট’ বা DSC A-20 আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিশনপ্রাপ্ত হতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ওই দিন নৌসেনার দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতর কোচিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই জলযানটি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এই আধুনিক জলযানটির নির্মাতা পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সংস্থা টিটাগড় রেল সিস্টেমস লিমিটেড। বাংলায় তৈরি এই জাহাজটি মূলত নৌসেনার ডুবুরি অভিযানে সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হবে। জলের নীচে মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, উদ্ধারকার্য এবং ডুবুরি প্রশিক্ষণের মতো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে DSC A-20 গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
৩৯০ টন ওজনের এই ‘ডাইভিং সাপোর্ট ক্রাফট’-এর কার্যকারিতা ইতিমধ্যেই একাধিক পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। নৌসেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দফতর বিশাখাপত্তনমে ধারাবাহিক ট্রায়ালের মাধ্যমে জাহাজটির সক্ষমতা যাচাই করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নৌসেনার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই জলযান আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
DSC A-20 আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় নৌসেনায় গ্রহণ করবেন দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি ভাইস অ্যাডমিরাল সমীর সাক্সেনা। বিজয় দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিনে এই কমিশনিং ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার বার্তাকে আরও জোরালো করবে।
এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগেরই বাস্তব রূপ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে অন্তত ২০০টি বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর বড় অংশই দেশের অভ্যন্তরে নির্মিত হবে।
বর্তমানে কোচি, মুম্বই, কলকাতা-সহ দেশের একাধিক ডক ইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স, মুম্বইয়ের মাজগাঁও ডক-এর মতো কারখানাগুলিতে এই মুহূর্তে প্রায় ৫৫টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণাধীন। এই বৃহৎ কর্মসূচিতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন
জানুয়ারিতে সরকারি কর্মীদের টানা ছুটির বন্যা! দুই দফায় মিলছে ১০ দিনের ছুটি
সব মিলিয়ে, বিজয় দিবসে DSC A-20-এর কমিশনিং শুধুমাত্র নৌসেনার প্রযুক্তিগত শক্তি বৃদ্ধি নয়, বরং দেশীয় শিল্প, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতার এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবেও চিহ্নিত হতে চলেছে।
আরও পড়ুন
নৈহাটিতে স্ত্রীর পচাগলা দেহ আগলে অসুস্থ স্বামী ও বিশেষ ভাবে সক্ষম পুত্র, দুর্গন্ধে ফাঁস রহস্য