দিল্লির লালকেল্লার নিকটবর্তী গাড়ি বিস্ফোরণের পরে, তদন্তকারীরা ফারিদাবাদে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসকদের কাছ থেকে এমন কিছু তথ্য পেয়েছেন যা একটি বৃহৎ সন্ত্রাসী কাঠামোর পরিমাপই প্রতিফলিত করে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তারা শুধুমাত্র অস্ত্র ও বিস্ফোরকই না লুকিয়ে রেখেছিল, পাশাপাশি এমন এক গোপন “অপারেশন হামদর্দ”ও গঠন করেছিল যা জীশ-ই-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammad) জঙ্গি সংগঠনের পরিকল্পনার অংশ বলে কলকবাজ করছে।
অপারেশন হামদর্দ কী ছিল?
গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ‘অপারেশন হামদর্দ’ (হামদর্দ মানে পারসিতে ‘সহানুভূতিশীল’) ছিল জইশ-ই-মহম্মদের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, যাতে তারা ভারতব্যাপী একটি চিকিৎসক-নেটওয়ার্ক গঠন করেছিল।
এই নেটওয়ার্ক গঠনের মূল দায়িত্ব dipercার করা হয়েছিল শাহীনা শহিদ নামে এক মহিলা চিকিৎসকের ওপর, যিনি জিমাত-উল-মোমিনাত (জাইশের মহিলা শাখা)-এর সদস্য বলে তদন্তকারীরা বলছেন।
গোয়েন্দাদের মতে, শুধুমাত্র এক-দুই চিকিৎসক নয়, শতাধিক ডাক্তারকে এই অপারেশনের আওতায় আনা হয়েছিল।
তিন ধাপে নিয়োগ-বিভাজন
তদন্তকারীর বক্তব্য অনুযায়ী, অপারেশন হামদর্দে নিয়োগ করা হয়েছিল তিন ধাপে:
1. আর্থিকভাবে দুর্বল সংখ্যালঘু মহিলারা — যারা টাকার লোভ দেখিয়ে গৃহীত হত এবং তাদের ‘সাদামাটা’ কাজ গোপনিপূর্ণ কাজ হিসেবে উপস্থাপিত হতো।
2. স্বপ্নবিলাসী ও বিদেশগামীরা — যারা স্বাচ্ছন্দ্যময়, বিদেশে আরামের জীবন এবং ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলোভিত করা হত।
3. কট্টরপন্থী চিন্তাধারা যুক্তরা — যারা মূলত জিহাদের পথ ধরে যাওয়া সহজ হবে, তাদের মধ্যে ‘উগ্র’ মহিলা বেছে নেওয়া হত।
এই তথ্যের ভিত্তি একাধিক গোয়েন্দা সূত্র এবং জেরা রিপোর্ট, এমনকি ধৃতদের ডায়েরি থেকে পাওয়া এনক্রিপ্টেড কড-ভাষায় কথোপকথনেও রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
কোড ও সাংকেতিক ভাষা
তদন্তকারীরা জানিয়েছে, ধরা পড়া ডাক্তারের ডায়েরি ও নোটবুকে頻繁 ‘অপারেশন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, তারা ব্যবহৃত সংকেতভাষায় এমন শব্দ পাওয়া গেছে যা অস্ত্র, অর্থ ও স্থানকে নির্দিষ্ট করতে গোপনভাবে ব্যবহার করা হত। উদাহরণস্বরূপ: “প্যাকেজ” বা “শিপমেন্ট” (বিস্ফোরক), “মেডিসিন স্টক” (ছোট অস্ত্র), “অপারেশন থিয়েটার” (রেকি বা টার্গেট এলাকায়) ইত্যাদি।
ডাক্তারদের মধ্যে পরিচিত সংকেতনামাও ছিল — যেমন “স্পেশালিস্ট”, “হার্ট স্পেশালিস্ট”, “আই স্পেশালিস্ট” এবং “ফিজিশিয়ান” — তাদের মধ্যে গোপন যোগাযোগে ব্যবহৃত হতো বলে অনুসন্ধানকারীরা বলছেন।
মূল জড়িতরা: শাহীনা ও তার “টিম ডি”
শাহীনা শহিদ — যিনি মৌলবাদী চিকিৎসক নেটওয়ার্কে উচ্চ দায়িত্বে ছিল। গোয়েন্দারা বলছেন, তিনি ওই “অপারেশন হামদর্দ”-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র।
তার নিয়ন্ত্রণে একটি “টিম ডি” কাজ করত — এতে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল।
শাহীনার দৃষ্টিকোণ থেকে, এই নেটওয়ার্ক শুধু বিস্ফোরক হামলা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী প্রবীণ এবং কিশোরীদের মাথা ধোলাই করে তাদের আদর্শগতভাবে নিয়োজিত করার জন্য গঠিত হয়েছিল।
তদন্ত ও প্রমাণ
ব্যারোডার (Faridabad) ও লখনউ পুলিশ-উভয় দফা এই নেটওয়ার্কের ওপর নজর দিচ্ছে।
মুজাম্মিল শাকিল নামে এক চিকিৎসকের জেরায় জানা গিয়েছে, তিনি একাধিকবার রেকি করার জন্য লালকেল্লায় গিয়েছিলেন।
তাদের ডায়েরি, সন্দেহভাজন ফোন মালিকানার বিশ্লেষণ এবং সংকেতভাষার মিলিটিদ তদন্তকারীদের জন্য বড় ছাড় ধরিয়েছে।
গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন যে ‘অপারেশন হামদর্দ’ ভবিষ্যতে আরও বড় সন্ত্রাসী ছক চালু করার অংশ হতে পারে, যা শুধুমাত্র বিস্ফোরণের মাধ্যমে নয়, সামাজিক ও মতাদর্শগত দৃষ্টিকোণ থেকেও ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ রূপ নেবে।
আরও পড়ুন
চলতি মাসেই মন্ধ হবে SBI-এর জনপ্রিয় পরিষেবা mCash, গ্রহক হলে অবশ্যই জানুন SBI-এর পরামর্শ
বিশ্লেষণ ও প্রভাব:
এই তথ্য যদি সত্যি ধরা পড়ে, তাহলে ‘অপারেশন হামদর্দ’ শুধু একাধিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনাই নয়; এটি একটি গভীর ধারণাগত যুদ্ধে দাওয়াত হতে পারে — যেখানে একগুচ্ছ চিকিৎসকরা “হোয়াইট-কলার জিহাদ” বা “সুক্ষ্ম জিহাদ” হিসেবে তাদের পেশাগত মর্যাদা ব্যবহার করে প্রকাশ্য ও গোপন কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, এমন নেটওয়ার্ক গঠন করলে এটি এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সন্ত্রাসী চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা শুধুমাত্র আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
তদন্ত চলছে, এবং ভবিষ্যতে আরও তথ্য সামনে আসতে পারে যা পুরো চিত্র পরিষ্কার করবে।
