দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন মোড়। তদন্তে উঠে এসেছে, ঘটনার মূল হোতা পুলওয়ামার বাসিন্দা এবং পেশায় চিকিৎসক ডা. উমর নবি। সোমবার সন্ধ্যায় মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিনি। ডিএনএ পরীক্ষায় মেলে তাঁর পরিচয়।
তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণের সময় ব্যবহৃত সাদা হুন্ডাই i20 গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন। ঘটনাটির মাত্র ১১ দিন আগে গাড়িটি কেনা হয়েছিল উমরের নামেই। গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ মিলে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যোগ
উমর নবি ছিলেন জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর একটি লজিস্টিক মডিউলের সক্রিয় সদস্য। এই মডিউলটি ফারিদাবাদ, লখনউ ও দক্ষিণ কাশ্মীর জুড়ে বিস্তৃত ছিল। অভিযোগ, মডিউলটিতে মোট ৯-১০ জন সদস্য ছিল, যাদের মধ্যে অন্তত ৫-৬ জনই চিকিৎসক। তাঁরা নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করে বিস্ফোরক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও উপকরণ জোগাড় করতেন।
ডিএনএ রিপোর্টে নিশ্চিত তথ্য
তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই সন্দেহ করেছিলেন, বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিটি উমর নবি। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা গাড়ির ধ্বংসাবশেষে পাওয়া মানবদেহের অংশের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়। ফলে নিশ্চিত হয় যে, উমরই বিস্ফোরণের সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
গ্রেফতার আতঙ্কে হঠকারি সিদ্ধান্ত
তদন্তে জানা গেছে, উমরের সহযোগীরা একে একে গ্রেফতার হওয়ায় তিনি চরম আতঙ্কে ভুগছিলেন। ৯ নভেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার আগেই ফারিদাবাদের এক গুদাম থেকে প্রায় ২,৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী।
৩০ অক্টোবর থেকে তিনি নিজের কর্মস্থল আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজে উপস্থিত ছিলেন না এবং একে একে পাঁচটি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। তদন্তকারীদের অনুমান, চাপে পড়ে উমর পালানোর চেষ্টা করছিলেন এবং আতঙ্কের মধ্যেই গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
‘প্রিম্যাচিউর’ বিস্ফোরণেই মৃত্যু
দিল্লি পুলিশের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে উমর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আতঙ্কে ও বিভ্রান্তিতে বোমা পরিবহনের সময় তা ‘প্রিম্যাচিউর’ অবস্থায় বিস্ফোরিত হয়। ফলে তিনিই মারা যান।
তদন্তে আরও জানা গেছে, তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ফরিদাবাদে গ্রেফতার দুই চিকিৎসক আদিল আহমেদ রাথার ও মুজাম্মিল শেখিল গণাই-এর সঙ্গে। এরা সবাই দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং অতীতে একসঙ্গে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত ছিলেন।
তদন্তের দিক
এনআইএ, এনএসজি ও দিল্লি পুলিশের বিশেষ দল যৌথভাবে এই বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তকারীদের মতে, উমরের মৃত্যু এই জঙ্গি চক্রের জন্য বড় ধাক্কা হলেও, এখনও সক্রিয় থাকা সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উপসংহার
একজন শিক্ষিত চিকিৎসক কীভাবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অংশ হয়ে উঠলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গোয়েন্দারা। উমর নবির মৃত্যু যেমন একটি অধ্যায় শেষ করেছে, তেমনই খুলে দিয়েছে ভারতের ভেতর লুকিয়ে থাকা ‘হোয়াইট কলার টেরর নেটওয়ার্ক’-এর রহস্য।
FAQ
১. প্রশ্ন: দিল্লির লালকেল্লার কাছে কবে বিস্ফোরণটি ঘটে?
উত্তর: সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লার মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
২. প্রশ্ন: বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তির পরিচয় কীভাবে নিশ্চিত হয়?
উত্তর: ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, নিহত ব্যক্তি ডা. উমর নবি।
৩. প্রশ্ন: ডা. উমর নবি কে ছিলেন?
উত্তর: তিনি পুলওয়ামার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন।
৪. প্রশ্ন: উমর নবি কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: তিনি জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর লজিস্টিক মডিউলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
৫. প্রশ্ন: উমর নবি বিস্ফোরণের সময় কোন গাড়ি ব্যবহার করছিলেন?
উত্তর: তিনি সাদা রঙের হুন্ডাই i20 গাড়ি চালাচ্ছিলেন, যা তাঁর নামেই কেনা হয়েছিল।
৬. প্রশ্ন: বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটেছিল?
উত্তর: তদন্তকারীদের মতে, এটি একটি ‘প্রিম্যাচিউর’ বিস্ফোরণ ছিল— অর্থাৎ বোমাটি আগে থেকেই বিস্ফোরিত হয়ে যায়, ফলে তিনিই প্রাণ হারান।
৭. প্রশ্ন: তাঁর সহযোগীদের সম্পর্কে কী জানা গেছে?
উত্তর: তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন দুই চিকিৎসক— আদিল আহমেদ রাথার ও মুজাম্মিল শেখিল গণাই, যাদের ফরিদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৮. প্রশ্ন: উমরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা কবে থেকে শুরু হয়?
উত্তর: তিনি ৯ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন এবং তার আগেই নিজের পাঁচটি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
৯. প্রশ্ন: তদন্তে কোন সংস্থাগুলি যুক্ত আছে?
উত্তর: এনআইএ, এনএসজি এবং দিল্লি পুলিশের বিশেষ দল যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছে।
১০. প্রশ্ন: গোয়েন্দাদের মতে, এই ঘটনার মূল শিক্ষা কী?
উত্তর: শিক্ষিত পেশাজীবীর জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হওয়া ভারতের অভ্যন্তরে নতুন ধরনের ‘হোয়াইট কলার টেরর নেটওয়ার্ক’-এর ইঙ্গিত দেয়।
#RedFortBlast #DelhiExplosion #NIAInvestigation

