দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তার অভিঘাত এসে পড়েছে বাংলার দুই ব্যস্ততম রেলস্টেশন হাওড়া এবং শিয়ালদায়। কখন, কোথায় নাশকতা ঘটতে পারে—এই অনিশ্চয়তার মাঝে যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পূর্ব রেল কঠোরতর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যে স্টেশনগুলির ওপর নির্ভর করেন, সেই দুই স্টেশনেই এখন চলছে বর্ধিত নজরদারি ও তল্লাশি অভিযান।
স্টেশন চত্বরে ব্যারিকেড, পার্কিং লটে কড়া চেকিং
পূর্ব রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হাওড়া এবং শিয়ালদা দুই স্টেশন চত্বরে অতিরিক্ত ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। পার্কিং অঞ্চলে ঢোকার আগেই প্রত্যেক যানবাহনকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আরপিএফ ও রেল পুলিশ যৌথভাবে গাড়িগুলি স্ক্যান করে সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কা খতিয়ে দেখছেন।
যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যান বাধ্যতামূলক
আরপিএফের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি যাত্রীর ব্যাগ এখন বাধ্যতামূলকভাবে স্ক্যান করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিয়ালদা স্টেশনে বসানো হয়েছে একটি উন্নত মানের স্ক্যানার, যার মাধ্যমে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে লাগেজ পরীক্ষা করা সম্ভব।
আরপিএফ মোতায়েন বৃদ্ধি, দীর্ঘ শিফটে কাজ করছেন কর্মীরা
দুই স্টেশনে মোতায়েন থাকা আরপিএফের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েকজন কর্মীকে দীর্ঘ সময় ধরে টহলে থাকতে হচ্ছে, যাতে স্টেশনের প্রতিটি কোণায় নজরদারি বজায় রাখা যায়। ট্রেন টার্মিনাল, প্ল্যাটফর্ম, সাবওয়ে—সব জায়গায়ই সশস্ত্র আরপিএফ সদস্যদের উপস্থিতি দৃশ্যমান।
হোটেল-লজেও নজরদারি বৃদ্ধি
শুধু স্টেশনই নয়, কলকাতার পুলিশও সক্রিয় হয়েছে। শহরের হোটেল ও গেস্টহাউসগুলিতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সন্দেহজনক বুকিং, ভিজিটর রেকর্ড এবং পরিচয়পত্র যাচাই আরও কঠোরভাবে করা হচ্ছে।
উচ্চ-স্তরের বৈঠক ও নির্দেশ
দিল্লি বিস্ফোরণের পর রাজ্য প্রশাসনে ইতিমধ্যেই হয়েছে উচ্চ-স্তরের বৈঠক। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা নিরাপত্তা রক্ষীদের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দিল্লিতে নিহত ১৩, সতর্ক দেশ
১০ নভেম্বর দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। তার পর ১৪ নভেম্বর জম্মু ও কাশ্মীরের নওগামে দুর্ঘটনাজনিত বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় আরও ৯ জনের। এই ধারাবাহিক ঘটনাই দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করতে বাধ্য করেছে প্রশাসনকে।
যাত্রীদের প্রতি বিশেষ আবেদন
স্টেশন কর্তৃপক্ষের অনুরোধ—
* আগে থেকেই সময় হাতে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছান
* ব্যাগ পরীক্ষা নিয়ে অস্বস্তি না দেখানোর অনুরোধ
* সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে রেল পুলিশকে জানান
যাত্রী সুরক্ষাই এখন প্রশাসনের প্রথম লক্ষ্য, আর তাই দিন-রাত নজরদারি বাড়িয়ে এই দুই স্টেশনকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা চলছে।
