বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে এমন কিছু নাম রয়েছে, যাদের ভূমিকা ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির বিকাশই অসম্পূর্ণ। সেই তালিকার শীর্ষে নিঃসন্দেহে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়—যাকে টলিউডে আজও সবাই এক নামে চেনে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সিনেমার মূল স্তম্ভ হয়ে থাকা এই অভিনেতাকে ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলে মানেন। সিনেমা নিয়ে যত বিতর্কই উঠুক না কেন, বুম্বাদার সামনে কথা বলার সাহস দেখায় না কেউ।
দুর্গাপুজোর মতো বড় উৎসবে বড় বাজেটের ছবি মুক্তি নিয়ে প্রতি বছরই টলিউডে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে থাকে। চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রসেনজিৎ অভিনীত বহুচর্চিত ছবি ‘দেবী চৌধুরানী’-র সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল একাধিক বড় মাপের সিনেমা। অন্য তারকারা যেখানে প্রতিযোগিতা নিয়ে কমবেশি উদ্বেগে ছিলেন, সেখানে প্রসেনজিৎ ছিলেন নিজের মতো শান্ত। যেন প্রতিযোগিতা শব্দটাই তাঁকে স্পর্শ করে না। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই—নিজের চরিত্রে সেরাটা দেওয়া।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা আবারও সেই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেছেন,
“আমার মনে হয় না আমাকে কেউ কোনও প্রতিযোগিতায় ফেলে। আমি এই প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকি না। যদিও একটা সময় ছিল যখন আমি সামিল হতাম।”
তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে কেরিয়ারের প্রথমদিকের সেই সময়ের গল্প, যখন পুরো ইন্ডাস্ট্রি তাঁর ওপর নির্ভরশীল ছিল।
“একটা সময় ছিল যখন আমি বাইরে গিয়ে হিন্দি ছবি করতে পারতাম না। কারণ পরিচালক, প্রযোজক থেকে দর্শক—সবাই তখন আমার ওপর ভরসা করত। প্রসেনজিতের ছবি মানেই হিট। সেই দায়বদ্ধতা ছেড়ে যেতে পারিনি।”
নিজেকে ‘প্রোডাক্ট’ হিসেবে তুলে ধরার প্রসঙ্গেও তিনি অকপট। তাঁর ভাষায়,
“আমাকে নায়ক নয়, প্রোডাক্ট বানিয়েছিল সবাই। যে ছবিতে আমি থাকতাম, সেটাই হিট হবে—এই বিশ্বাসই আমাকে প্রথম বেঞ্চে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন অন্য কোথাও দ্বিতীয় স্থানে গিয়ে দাঁড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।”
তবে সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাও। আর সেই পরিবর্তনই তাঁকে নতুন স্বাদে কাজ করতে শিখিয়েছে।
“ময়ূরাক্ষী’ বা অন্য ঘরানার ছবি করার পর বুঝেছি, আমি আর কোনও প্রতিযোগিতায় নেই। তখনই হিন্দি ছবিতে কাজ করার সাহস পেয়েছি। মালায়ালাম বা অন্য ভাষার ছবিও করেছি—যা আগে কখনও ভাবতে পারিনি।”
টলিউডের একচ্ছত্র তারকা হয়েও নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের এই যাত্রাই প্রসেনজিৎকে আজও প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুখ আজও বিশ্বাস করেন—একজন শিল্পীর আসল প্রতিযোগিতা শুধুই তাঁর নিজের সঙ্গে।
FAQ
১) প্রশ্ন: কেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলা হয়?
উত্তর: দীর্ঘ চার দশক ধরে বাংলা সিনেমাকে একা কাঁধে তুলে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই তাঁকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলা হয়।
২) প্রশ্ন: দুর্গাপুজোর সময় ‘দেবী চৌধুরানী’ কোন পরিস্থিতিতে মুক্তি পায়?
উত্তর: একই সময়ে একাধিক বড় ছবি মুক্তি পাওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছিল।
৩) প্রশ্ন: প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রসেনজিতের মনোভাব কী?
উত্তর: তিনি বলেন যে তিনি কোনও প্রতিযোগিতায় নিজেকে ফেলে দেখেন না এবং এ নিয়ে উদ্বিগ্নও নন।
৪) প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুতে তিনি কেন হিন্দি ছবিতে কাজ করতে পারেননি?
উত্তর: কারণ তখন গোটা ইন্ডাস্ট্রি তাঁর উপর নির্ভর করত এবং তাঁর ছবি মানেই ছিল হিট।
৫) প্রশ্ন: প্রসেনজিৎ নিজেকে ‘প্রোডাক্ট’ বলা বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে দর্শক ও প্রযোজকরা তাঁর নামকে সাফল্যের নিশ্চয়তা মনে করতেন।
৬) প্রশ্ন: কেন তিনি অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে ‘দ্বিতীয় স্থানে’ যেতে চাননি?
উত্তর: কারণ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে প্রথম স্থানে বসানো হয়েছিল; তাই অন্য কোথাও গিয়ে পিছনের সারিতে থাকা তাঁর পক্ষে মানা ছিল না।
৭) প্রশ্ন: কোন ছবিগুলি তাঁর কেরিয়ার বদলে দিয়েছে?
উত্তর: ‘ময়ূরাক্ষী’-র মতো ভিন্ন ধারার ছবি তাঁকে নতুনভাবে ভাবতে এবং নতুন ভাষায় কাজ করতে সাহস দিয়েছে।
৮) প্রশ্ন: বর্তমানে কেন তিনি বিভিন্ন ভাষায় ছবি করতে পারছেন?
উত্তর: কারণ এখন তিনি নিজেকে প্রতিযোগিতার বাইরে মনে করেন এবং কাজের প্রতি স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন।
৯) প্রশ্ন: প্রতিযোগিতা নিয়ে অন্য অভিনেতাদের থেকে প্রসেনজিৎ কীভাবে আলাদা?
উত্তর: অন্যরা প্রতিযোগিতা নিয়ে চিন্তিত থাকলেও তিনি সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত ও আত্মবিশ্বাসী।
১০) প্রশ্ন: দর্শকদের ভরসা তাঁর কেরিয়ারকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
উত্তর: দর্শকদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা তাঁকে সবসময় বাংলাতেই থাকতে বাধ্য করেছিল, যা তাঁর কেরিয়ারকে একদিকে গড়ে তুলেছে, আবার সীমাবদ্ধও করেছে।
#ProsenjitChatterjee
#TollywoodIndustry
#BumbaDa

