প্রাক্তন ওই জঙ্গিদের পরিবার পাকিস্তানে ফিরতে নারাজ। কাঁধ থেকে বন্দুক নামিয়ে জঙ্গি স্বামীরা সংসারের হাল ধরেছেন অনেক দিন। ‘মূল স্রোতে’ ফিরতে তাঁরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ২০১০ সালে সরকারি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তাঁরা ঘর বেঁধেছেন। নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। সপরিবারে জম্মু-কাশ্মীরে থাকার সুযোগও পান। কিন্তু ফের ‘বিপদ’ তাদের জীবনে। তাল কাটল গত মঙ্গলবার পহেলগাঁও জঙ্গিহানার পর। সরকারি নির্দেশ, পাকিস্তান থেকে আগতদের সে দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু প্রাক্তন ওই জঙ্গিদের পরিবার পাকিস্তানে ফিরে যেতে নারাজ। তাঁদের স্ত্রীরা বলছেন, পাকিস্তানে যাওয়ার চেয়ে জম্মু-কাশ্মীরে মরে যাওয়া অনেক ভাল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এমনই এক মহিলা বলেন, ‘‘হয় আমাদের কাশ্মীরে থাকতে দিন, নয়তো মেরে ব্যাগে পুরে ছুড়ে দিন।’’ অর্থাৎ, নিজেদের ইচ্ছায় তাঁরা পাকিস্তানে যেতে নারাজ।
আলিজ়া রফিক নামে এক মহিলা প্রাক্তন এক জঙ্গিকে বিয়ে করে ২০১৩ সালে তাঁরা কাশ্মীরে ঘর বাঁধেন। জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন সরকারের তরফে পুনর্বাসন পান রফিকরা। এখন তাঁরা উত্তর কাশ্মীরে। তবে আলিজ়া জানান, পুলিশ তাঁদেরকে কাশ্মীর ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? প্রশ্ন ওই মহিলার। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দেশ ছাড়তে বলা হচ্ছে! আমার তিন সন্তান। ওরা (পুলিশ) বলছে, অসুবিধা থাকলে ছোট মেয়েকে এখানেই রেখে যেতে। কারণ, ও এতটাই ছোট যে, অন্য কোথাও গেলে বিপদ-আপদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ছোটো মেয়েকে না নিয়ে আমরা চলে যাব? আমরা যাবই বা কোথায়?
প্রাক্তন ওই জঙ্গির স্ত্রী জানিয়েন, ৩ বছর হল তাঁরা জম্মু-কাশ্মীরে বাড়ি করেছে। তিনি বলেন, সরকার সুযোগ দিয়েছিল। সরকারি সহায়তাতেই এখানে এসেছি। সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমাদের ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ডও রয়েছে। ভোটও দিয়েছি। এই সব বলতে বলতে অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন আলিজ়া। জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিন্হার কাছে তাঁর আর্জি, ‘আমাদের থাকতে দিন। আমাদের ভুল কোথায়?’
বস্তুত, ২০১০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান বা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা সমস্ত কাশ্মীরি জঙ্গি, যারা আত্মসমর্পণ করবে, তারা সরকারি সহায়তা পাবে। ওই ঘোষণার মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনে উৎসাহিত করা হয়। যদিও সরকার একে ঠিক পুনর্বাসন প্রকল্প বলেনি। বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে নেওয়া পদক্ষেপ কিংবা উদ্যোগ। লক্ষ্য ছিল, উপত্যকায় শান্তি ফেরানো এবং সামগ্রিক উন্নয়ন।
এখন আলিজ়ার মতো মহিলারা সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছেন। আলিজ়ার মতো মহিলাদের কথায়, আপনারা এতটা নিষ্ঠুর হবেন না। আমরা কোনও পাপ করিনি। আমাদের এত বড় শাস্তি কেন দিচ্ছেন? আলিজ়া বলছেন, ‘‘যদি একান্তই থাকতে দিতে না চান, তাহলে মেরে ব্যাগে ভরে সীমান্তের ওই পারে ফেলে দিন। কিন্তু আমরা নিজেরা পাকিস্তানে যাব না। জম্মু-কাশ্মীরে আলিজ়ার মতো প্রাক্তন জঙ্গি পরিবার কর্ত্রীরা বলছেন, তাঁরা পাকিস্তানে যাবেন না। তাঁদের মধ্যে এক জনের কথায়, ১৫ বছর হল শান্তিতে বসবাস করছি। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। কর্তারা কাজ যাচ্ছে। এই সাজানো সংসার ভেঙে আর কোথাও যেতে পারব না।
আরও পড়ুন,পর্যটকদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানো কর্তব্য পালনে ব্যর্থ! ক্ষমা চাইলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর