দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে চূড়ান্ত হল ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (FTA)। তেল আবিবে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও ইজরায়েলের বাণিজ্যমন্ত্রী নীর বরকত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় তোলার লক্ষ্যে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১০ সালে শুরু, ২০২৫-এ এসে চূড়ান্ত
২০১০ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা। বছর গড়াতে গড়াতে আট দফা আলোচনা হয়েছে, মাঝে কিছুদিন স্থবিরতাও দেখা দিয়েছে। তবে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ফের গতি পায় আলোচনা। অবশেষে ২০২৫-এর শুরুতে এসে সেই আলোচনারই সফল পরিণতি মিলল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে।
এই সফরে পীযূষ গোয়েল ভারত থেকে ৬০ সদস্যের শিল্পোদ্যোগী প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে ইজরায়েল যান। FTA-র অগ্রগতি পর্যালোচনা ও শর্তাবলী চূড়ান্ত করাই ছিল সফরের মূল উদ্দেশ্য। সফর শেষে ইতিবাচক খবরই এল—চুক্তির সব শর্তে একমত হয়েছে দুই দেশ।
বাণিজ্য হ্রাসের মধ্যেই স্বস্তির বার্তা
গত কয়েক বছরে দুই দেশের বাণিজ্য বিশেষ বৃদ্ধি পায়নি। বরং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারতের ইজরায়েলে রফতানি ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে দাঁড়ায় ২.১৪ বিলিয়ন ডলারে। কমেছে আমদানিও। এমন পরিস্থিতিতে FTA দুই দেশের বাণিজ্যে নতুন করে গতি আনবে বলে আশা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি কার্যকর হলে শুল্ক কমবে, বাধা কমবে, ফলে বড় আকারে লাভবান হবে উভয় দেশই।
হিরে থেকে উচ্চ প্রযুক্তি—বাণিজ্যে বাড়ছে বৈচিত্র্য
ভারত–ইজরায়েলের বাণিজ্যে এতদিন পর্যন্ত প্রধান ভূমিকা ছিল হিরে, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যের। তবে গত কয়েক বছরে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেকটাই আধুনিক হয়েছে। এখন তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তির সরঞ্জাম, চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন শিল্প নির্ভর পণ্য।
ভারতের রফতানি তালিকার মধ্যে রয়েছে—
* মুক্তো ও মূল্যবান পাথর
* অটোমোটিভ ডিজেল
* যন্ত্রপাতি
* পোশাক
* কৃষিজাত পণ্য
FTA কার্যকর হলে এসব পণ্যের ইজরায়েলি বাজারে প্রবেশ আরও সহজ হবে। বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য রফতানি বাড়লে সরাসরি উপকৃত হবেন ভারতীয় কৃষকরা।
দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগেও নতুন দিক খুলবে
FTA স্বাক্ষরের পাশাপাশি দুই দেশের মন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বাড়ানোর নতুন দিক নিয়েও আলোচনা করেছেন। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, কৃষি গবেষণা, পানি ব্যবস্থাপনা—এসব খাতেই দুই দেশের সহযোগিতা আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
ভারত ও ইজরায়েলের কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বহুদিনের। সেই সম্পর্কে এবার যুক্ত হল অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতার নতুন অধ্যায়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করে আগামী দশকে আরও বড় শক্তিতে পরিণত করবে এই FTA—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
নেপালে ফের উত্তাপ: জেন-জি বিক্ষোভে কার্ফু জারি
এই ঐতিহাসিক চুক্তি কার্যকরী হলে ভারত–ইজরায়েল বাণিজ্য নতুন গতি পাবে, বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান—এমন আশাই করছে দুই দেশ।
