নভেম্বরের শেষ প্রান্তে এসেও বঙ্গে শীত পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। সকালের হালকা ঠান্ডা আর রোদ উঠতেই মিলিয়ে যাওয়া শীত– এই বছর শুরুর সময় থেকেই যেন কোথাও একটা আটকে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ধারাবাহিক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শীতের পথে তৈরি হচ্ছে সাময়িক বাধা। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দিতোয়া’।
শ্রীলঙ্কায় দিতোয়ার তাণ্ডব
ভারতীয় মৌসম ভবন (IMD) এবং আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দিতোয়া’ ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া, অতি ভারী বৃষ্টিপাতে লণ্ডভণ্ড সেই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা। প্রাণহানিও ঘটেছে বলে খবর।
তবে স্বস্তির বিষয়— এই ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা নেই।
এখন কোথায় রয়েছে ঘূর্ণিঝড় দিতোয়া?
সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী:
ট্রিনকোমালির দক্ষিণ-পশ্চিমে: ৪০ কিমি
বাট্টিকেলোয়ার উত্তর-পশ্চিমে: ১০০ কিমি
কারাইকালের দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে: ৩২০ কিমি
পুদুচেরির দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে: ৪৩০ কিমি
চেন্নাইয়ের দক্ষিণে: ৫৩০ কিমি
আবহাওয়া দফতরের নথি অনুসারে, শুক্রবার সকাল ৮:৩০-এ এটি অবস্থান করছিল ৮.৩° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮১.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ঘূর্ণিঝড়টি প্রায় ১০ কিমি বেগে উত্তর-উত্তর-পশ্চিমমুখী।
পরবর্তী গতিপথ— কোন দিকে এগোবে দিতোয়া?
মৌসম দফতর জানিয়েছে,
৩০ নভেম্বর ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি
✔ উত্তর তামিলনাড়ু
✔ পুদুচেরি
✔ দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে আছড়ে পড়তে পারে।
তারপর স্থলভাগে প্রবেশ করলেই এর শক্তি দ্রুত হ্রাস পাবে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’ দুর্বল হয়ে এখন মালাক্কা প্রণালিতে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এই দুটি সিস্টেমের মিলিত প্রভাবে বাংলার শীত কিছুটা দেরিতে নামছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
তাহলে বাংলার আবহাওয়ায় কী প্রভাব পড়বে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট জানিয়েছে—
* আগামী ৭ দিনে পশ্চিমবঙ্গে কোনও আবহাওয়া সতর্কতা নেই
* দিতোয়ার কারণে বাংলায় কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই
* সরাসরি বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও নেই
তবে হাওয়া পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে, যা শীত নামার ক্ষেত্রে সামান্য দেরি করাতে পারে।
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিপদসঙ্কেত
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে
* প্রচণ্ড বর্ষণ
* ঝোড়ো হাওয়া
* সমুদ্র উত্তাল
পর্যটক ও মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
কবে থেকে নামবে জাঁকিয়ে ঠান্ডা?
আবহাওয়াবিদদের অনুমান—
দিতোয়া স্থলভাগে দুর্বল হয়ে পড়লে
সাগরের নিম্নচাপগুলি নিষ্ক্রিয় হলে
উত্তর ভারতের ঠান্ডা হাওয়া অবাধে দক্ষিণবঙ্গের দিকে নামতে পারবে
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাতে ও ভোরে তাপমাত্রা পতন শুরু হতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে শীত আরও জাঁকিয়ে পড়ার সম্ভাবনা।
শেষ কথা
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় দিতোয়া শীতের পথে বাধা হলেও বাংলায় এর কোনও বিপদ নেই। শীঘ্রই আবহাওয়া স্থিতিশীল হলে শীত নামার পথ আরও প্রশস্ত হবে। নভেম্বরে দেরিতে এলেও, ডিসেম্বরে বঙ্গে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
