মা—একটি শব্দেই লুকিয়ে থাকে গভীর আদর, নিরাপত্তা আর নির্দ্বিধায় ভালবাসার স্পর্শ। জীবনের এক পর্যায়ে এসে মানুষ বুঝতে পারে, বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা বা ভালবাসা প্রকাশ না করাটাই হয়তো সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু তখন অনেক সময়ই দেরি হয়ে যায়। অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। মায়ের না থাকার শূন্যতা, ভুল বোঝাবুঝির আক্ষেপ এবং ভালোবাসার অমোচনীয় স্মৃতি মিলেমিশে তিনি লিখলেন এক আবেগঘন খোলা চিঠি—মায়ের জন্মদিনে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত সেই চিঠিতে শতাব্দী প্রথমেই জানান, তিনি কোনওদিন তাঁর মাকে বিশেষ করে ‘মিস’ করেননি—কারণ তাঁদের প্রজন্মে এ ধরনের আবেগের প্রকাশ খুব কমই ঘটত। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোও তাঁদের কাছে তেমন প্রচলিত ছিল না। তাই তাঁর কাছে ‘উইশ করা’ কখনও স্বাভাবিক মনে হয়নি। তিনি লেখেন, “এই উইশ করা যেন কাটা চামচ দিয়ে চচ্চড়ি ভাত খাওয়া বাঙালীদের জন্য তৈরি বলে আমার মনে হতো।”
কিন্তু সময় বদলে গেলে মানুষের উপলব্ধিও বদলায়। মা চলে যাওয়ার পর শতাব্দীর মনে হয়েছে—এতদিনে অন্তত একজন মানুষকে তিনি বলতে পারতেন, তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তিনি। কিন্তু সেই কথাগুলো আর বলা হয়নি। খোলাখুলি স্বীকার করে অভিনেত্রী বলেন, যে চিঠি তিনি বহুবার লিখতে চেয়েছেন, তা আজও লেখা হয়নি শুধু এই কারণে যে “মায়ের ঠিকানা আর জানা নেই”। ফোনে বা মেসেজেও জানাতে পারেননি, কারণ মা ফেলে যাওয়া ফোনটি আর রিচার্জ করা হয়নি।
চিঠিতে নিজের ভুলের কথাও অকপটে তুলে ধরেছেন শতাব্দী। জানান, জীবনের নানা চাপ, দৌড়ঝাঁপের মাঝে কখনও রাগ প্রকাশ করেছেন মায়ের ওপরেই। মায়ের বারবার ফোন করা তাঁকে বিরক্ত করত, বেশি প্রশ্ন করলে থামিয়ে দিতেন। এখন বুঝতে পারেন—সেই সময়টুকু হয়তো মায়ের বুকেই কষ্ট হয়ে জমে থাকত। কিন্তু মা তো অভিমান করেন না, দুঃখ জমিয়ে রাখেন না—মেয়েকে সেই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন তিনি।
শতাব্দীর স্বীকারোক্তি—নিজের কবিতায় তিনি মায়ের অসহায়তা ফুটিয়ে তুলেছেন কখনও, কিন্তু মায়ের গুরুত্ব যে তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু, সেটি কখনও প্রকাশ করেননি। আজ মাকে হারিয়ে তিনি বুঝেছেন—এই পৃথিবীতে মায়ের অভাব পূরণ করার মতো আর কেউ নেই।
মায়ের জন্মদিনে তাই তিনি লিখেছেন—“আজ আমি বড় একা, প্রতি মুহূর্তে তোমাকে বড্ড মিস করি। পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তাহলে আমার মা হয়ে এসো। প্রত্যেকদিন তোমাকে উইশ করব, একদিন নয়।”
এভাবেই জমে থাকা ভালোবাসা, না বলা কথার আক্ষেপ এবং অমোচনীয় স্মৃতির বেদনাকে তিনি খোলা চিঠিতে প্রকাশ করেছেন।
শতাব্দীর এই পোস্টে নেটিজেনরা আবেগে ভেসেছেন। অনেকে প্রয়াত মাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, আবার অনেকে স্বীকার করেছেন—মাকে হারানোর শূন্যতা কেউ কোনওদিন পূরণ করতে পারে না। জীবনে মায়ের অবদানই যে সবচেয়ে বড়, তা অনেকেই বোঝেন তাঁর চলে যাওয়ার পরেই।
এই খোলা চিঠি তাই শুধু একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়—হয়তো হাজারো সন্তানের হৃদয়ের অন্তর্লুকানো অপরাধবোধ আর ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি।
আরও পড়ুন
‘নারী চরিত্র বেজায় জটিল’: কালীপুজোয় চড় খেয়ে ভাইরাল অঙ্কুশ, প্রকাশ্যে এলো মজাদার প্রি-টিজার
