জ্যোতিষশাস্ত্র মতে শনি এক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাববাহী গ্রহ। তাঁর প্রভাব ধীরগতিতে শুরু হলেও তা মানুষের জীবনকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে যখন শনির সাড়ে সাতি শুরু হয়, তখন অনেকেই জীবনে বাধা, দুশ্চিন্তা কিংবা অস্থিরতার মুখোমুখি হন বলে বিশ্বাস করা হয়। জন্মকুণ্ডলিতে চন্দ্রের রাশির উপর ভিত্তি করে এই সাড়ে সাতির সময়কাল নির্ধারণ হয় এবং মোট সাড়ে সাত বছর স্থায়ী থাকে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রথম সাড়ে সাতি পিতামাতার জন্য বিপদ সংকেত বহন করতে পারে, দ্বিতীয় সাড়ে সাতি জীবিকায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং তৃতীয় সাড়ে সাতি গুরুজনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই বহু মানুষ শনির কুপ্রভাব কাটাতে বিভিন্ন নিয়ম পালন করেন। নিচে সেই বিশ্বাস অনুযায়ী বেশ কিছু প্রচলিত উপায় তুলে ধরা হল—
১) “ওম শ্যাম শনিচারায় নমঃ” মন্ত্র জপ
সূর্যাস্তের পর প্রতিদিন ১০৮ বার এই মন্ত্র পাঠ করলে শনির দোষ কমে—এমন ধারণা প্রচলিত। নিয়মিত জপ মনকে স্থির করে, উদ্বেগও কমায়।
২) হনুমানজির উপাসনা
ধারণা আছে, হনুমানের আরাধনা করলে শনির কুপ্রভাব হ্রাস পায়। প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যার পর হনুমান চালীসা পড়া শুভ বলে মনে করা হয়।
৩) শনির গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ
শনিদেবের আশীর্বাদ লাভের জন্য অনেকেই শনির গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করেন। এতে মানসিক শক্তি বাড়ে এবং বাধা মোকাবিলার ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হয়।
৪) “ওম নমো নারায়ণায়” জপ
বিষ্ণুমন্ত্র পাঠে নেতিবাচক সময় দূর হয়—এমন বিশ্বাস রয়েছে। নিয়মিত পাঠ মনকে শান্ত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
৫) শনিবার নিরামিষ ভোজন ও দান
শনিবার নিরামিষ খাওয়া এবং সাধ্যানুযায়ী দান করাকে শুভ কাজ হিসেবে দেখা হয়। দান মানুষের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি ও সামাজিক সংযোগ বাড়ায়।
৬) কাক বা কালো পশুকে খাদ্যদান
কাক, কালো কুকুর বা অন্যান্য কালো রঙের প্রাণীকে খাবার দিলে শনির দোষ দূর হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এটি দয়া ও সহমর্মিতা প্রকাশেরও এক উপায়।
৭) শিবপূজা ও শিব চালীসা পাঠ
শনিবার শিবের আরাধনা ও শিব চালীসা পাঠে জীবনে স্থৈর্য আসে—এ ধারণা অনেকেরই।
৮) অশ্বত্থ গাছের নিচে প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্ত্রপাঠ
শনিবার অশ্বত্থ গাছের নিচে প্রদীপ জ্বালিয়ে হনুমান চালীসা পড়লে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
৯) কালো তিল দিয়ে স্নান
শনিবার থেকে শুরু করে টানা ৪৪ দিন কালো তিল মিশ্রিত জলে স্নান করলে শনির দোষ কমে—এমন নিয়ম প্রচলিত আছে। এটি শরীরকেও সতেজ রাখে।
জ্যোতিষীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এসব নিয়ম মানলে সাড়ে সাতির চাপ কিছুটা কম অনুভূত হয় বলে অনেকে মনে করেন। যদিও বিজ্ঞান এসব দাবিকে সমর্থন করে না, তবুও আধ্যাত্মিক চর্চা, নিয়মিততা ও মনোসংযম জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—এটি সত্য। চাইলে আপনি নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী এই নিয়মগুলি অনুসরণ করতে পারেন।
আরও পড়ুন
Vastu: ঠাকুরঘর কেমন হওয়া উচিত? জানুন আদর্শ গঠন ও নিয়ম