হাতে কোন রঙের সুতো শুভ?—ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপকারিতার বিশদ প্রতিবেদন

হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন উপাচারের মধ্যে হাতে রঙিন সুতো বা ডোর বাঁধার প্রথা অত্যন্ত প্রাচীন। মন্দির বা পুণ্যস্থানের পূজা-আর্চা শেষে দেবদেবীর আশীর্বাদ হিসেবে হাতে সুতো বাঁধা হয়। বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, প্রতিটি রঙের সুতো ভিন্ন ভিন্ন ধরনের শক্তি, শুভফল এবং সুরক্ষা প্রদান করে। সেই কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত রঙের সুতো পরার রীতি প্রচলিত। পাশাপাশি, এই সুতো পরার আগে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানাও জরুরি।

সুতো পরার আগে যে নিয়মগুলি মানা প্রয়োজন

সুতো
সুতো

হাতের সুতো কেনার পর প্রথমেই সেটিতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করে নিতে হয়। কারণ অধিকাংশ সময় সুতো মন্দিরের বাইরের দোকান থেকে কেনা হয়, সরাসরি পূজার ঘর থেকে নয়। যেখান থেকেই কিনে আনা হোক, দেবতাকে নিবেদন করার আগে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেওয়াই নিয়ম। এরপর রঙ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দেবদেবীর চরণে ছুঁইয়ে ছেলে-মেয়েরা নির্দিষ্ট হাতে সুতো পরেন—ছেলেরা ডান হাতে, মেয়েরা বাঁ হাতে। বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রেও বাঁ হাতেই সুতো পরার রীতি বিদ্যমান।

ভিন্ন রঙের সুতোর গুরুত্ব ও উপকারিতা

সুতো
সুতো

১. হলুদ সুতো: সৌভাগ্য ও উন্নতির প্রতীক
হলুদ রঙ হিন্দু ধর্মে শুভ, পবিত্র ও মঙ্গলসূচক। কব্জিতে হলুদ সুতো বাঁধলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। কর্মক্ষেত্র, পরিবার ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি আসে। মানসিক স্থিরতা, ইচ্ছাপূরণ এবং আয়ুবৃদ্ধিতেও হলুদ সুতোর ভূমিকা রয়েছে বলে প্রচলিত ধারণা।

২. লাল সুতো: দেবতাদের আশীর্বাদ ও অশুভ থেকে রক্ষা
লাল সুতো সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। মন্দিরে পূজার পর পুরোহিতরা সাধারণত লাল সুতোই আশীর্বাদ হিসেবে দেন।
লাল সুতো পরলে—
*দেবতাদের আশীর্বাদ পাওয়া যায়,
*অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষা মেলে,
*পারিবারিক অশান্তি দূরে থাকে,
*আর্থিক উন্নতি ঘটে,
*রোগ-ব্যাধির প্রভাব কমে।
বিশেষত শুক্লাচতুর্দশীর দিন এই সুতো ঠাকুরের চরণে ছুঁইয়ে বাঁধা শুভ। অবিবাহিত নারী ও পুরুষ ডান হাতে, বিবাহিত নারীরা বাঁ হাতে এটি পরেন।

৩. কমলা সুতো: সম্মান, প্রতিপত্তি ও রাজসিক শক্তির প্রতীক
বাঙালি সমাজে কমলা সুতো খুব প্রচলিত না হলেও এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে।
ধারণা করা হয়, কমলা সুতো—
*সমাজে মান-সম্মান বাড়ায়,
*প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে,
*ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে।
এই রং অনেক সময় তপস্যা, ব্রহ্মচর্য এবং আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক হিসেবেও পরিচিত।

৪. কালো সুতো: নজরদোষ ও অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা
কালো সুতো সাধারণত সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষার প্রতীক।
কালো সুতো পরলে—
*নজরদোষ দূর হয়,
*অশুভ শক্তির প্রভাব কমে,
*দুর্ঘটনার আশঙ্কা হ্রাস পায়,
*মানসিক শান্তি বজায় থাকে,
*পরিবারের সুখ-শান্তি অটুট থাকে।
বিশেষত শিশুদেরও অনেক সময় নজরদোষ থেকে বাঁচাতে কালো সুতো বাঁধা হয়।

আরও পড়ুন
মাত্র তিন ব্যায়ামেই ফিরবে তারুণ্যের দীপ্তি: ত্বকের বয়স কমাতে কার্যকর যোগাসন

উপসংহার
আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, মঙ্গলকামনা ও মানসিক শান্তির জন্য হাতে রঙিন সুতো পরার প্রথা বহুদিনের। প্রতিটি রঙেরই আলাদা শক্তি ও প্রতীকী অর্থ আছে। তাই বিশেষ উদ্দেশ্যে বা প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক রঙের সুতো পরা—হিন্দু সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও এটি মূলত বিশ্বাসনির্ভর, তবুও অনেকেই মানসিকভাবে সুরক্ষিত ও ইতিবাচক অনুভব করেন, যা জীবনে কার্যকর ফল বয়ে আনতে পারে।

আরও পড়ুন
শীতে পুরুষদের ঠোঁটের বিশেষ যত্ন: সহজ ঘরোয়া পদ্ধতিতে পান মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর ঠোঁট

শুধু হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় না, জোয়ান খেলে শরীরের অনেক সমস্যা নিবারণ হয় মুখরোচক বাদাম চিক্কি খেতে দারুন, বাড়িতেই তৈরী হবে, জানুন রেসিপি এইভাবে তেজপাতা পোড়ালে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে 5 Best Night Creams ৪ মাসের শিশু ২৪০ কোটির মালিক