ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বাড়তে থাকা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরাসরি মাঠে নেমে খোঁজ নিতে উদ্যোগী হলো কেন্দ্রীয় বিজেপি। শনিবার দলীয় সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সাত সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চালু থাকা এসআইআর কার্যক্রম খতিয়ে দেখে কেন্দ্রে রিপোর্ট দেবে।
কমিটির নেতৃত্বে আছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। সদস্য হিসেবে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, এছাড়াও আছেন কে লক্ষ্মণ, কে অন্নামালাই, ওমপ্রকাশ ধনখড়, অলকা গুর্জর এবং জামইয়াং শেরিং নামগয়াল। জাতীয় স্তরে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে সমন্বয় সাধন করা ও রাজ্যভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করা এই কমিটির মূল দায়িত্ব।
বিভিন্ন রাজ্যে চাপ ও অনিয়মের অভিযোগ
বর্তমানে বিহারের পর আরও ৯টি রাজ্য এবং ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর চলছে। পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, কেরল ও গুজরাতে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপের অভিযোগ উঠেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই গত ৩১ দিনে ‘কাজের চাপ ও আতঙ্কে’ ৩৩ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই অভিযোগকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
মাঠে নেমে পরিদর্শন শুরু কমিটির
এসআইআর প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও প্রয়োগের সময় অসুবিধার জায়গাগুলি খতিয়ে দেখতে শনিবার থেকেই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন রাজ্যে সফর শুরু করেছেন। প্রথম দিনেই কমিটির সদস্য অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় নদিয়া জেলার একাধিক জায়গায় গিয়ে বিএলওদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এসআইআর-এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বাস্তব চিত্র সংগ্রহ করেন।
কমিশনের দাবি: ৯৯% ভোটারকে ফর্ম বিতরণ সম্পন্ন
অভিযোগের তরঙ্গে বিপাকে পড়লেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভোটারকে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হয়েছে। কমিশনের দাবি, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই পরিষ্কার ও হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ এগোচ্ছে।
রাজনৈতিক পারদ চড়ছে
এসআইআর(SIR) ঘিরে রাজ্য থেকে কেন্দ্র—সবস্তরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। বিজেপির জাতীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটি মাঠে নামায় উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। বিজেপির দাবি, ‘‘অনিয়ম থাকলে তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে,’’ আর বিরোধীদের অভিযোগ—‘‘এসআইআর-কে হাতিয়ার করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোতে প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ হচ্ছে।’’
পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র সামনে আনতে আগামী কয়েকদিন বিভিন্ন রাজ্যে কমিটি আরও পরিদর্শন করবে। এই প্রতিবেদন জমা পড়লেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় দলীয় নেতৃত্ব পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।