শসা আমাদের খাদ্যতালিকার অত্যন্ত পরিচিত একটি সবজি, যা তার সতেজ স্বাদ, উচ্চ জলীয় অংশ এবং নানা পুষ্টিগুণের জন্য জনপ্রিয়। তবে যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনই কিছু মানুষের জন্য শসা হতে পারে বিপদজনকও। বিশেষ শারীরিক অবস্থা বা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে অনেকের ক্ষেত্রে শসা খাওয়া বাড়িয়ে দিতে পারে অস্বস্তি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। নিচে সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অতিরিক্ত ফাইবার থেকে হজমের সমস্যা

শসাতে ফাইবারের পরিমাণ ভালোই থাকে, যা সাধারণত হজমের জন্য উপকারী। তবে যাদের হজম শক্তি দুর্বল, তাদের জন্য এই ফাইবারই হয়ে উঠতে পারে অস্বস্তির কারণ। অতিরিক্ত ফাইবার গ্যাস, পেট ফাঁপা, বদহজম বা পেটে মোচড়ের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যারা আগে থেকেই অ্যাসিডিটি বা ব্লোটিং সমস্যা ভোগেন, তাদের শসা কম খাওয়াই উচিত, কারণ এটি তাদের অস্বস্তি বাড়াতে পারে।
ঠান্ডা প্রকৃতির খাবার হিসেবে শসার অসুবিধা

শসা স্বভাবগতভাবে ঠান্ডা প্রকৃতির। ফলে যাদের সর্দি–কাশি, কফ, গলার ব্যথা বা সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য শসা ক্ষতিকর হতে পারে। শসা কফ বাড়িয়ে ঠান্ডাজনিত সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। যারা ‘কোল্ড সেনসিটিভ’, অর্থাৎ যাদের হাত-পা ঠান্ডা থাকে বা শরীর সহজে ঠান্ডা হয়ে যায়, তাদের শসা এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ।
অ্যালার্জির ঝুঁকি
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শসা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। শসা খাওয়ার পর ঠোঁট বা গলায় চুলকানি, ফোলাভাব, পেট ব্যথা বা বমি ভাব দেখা দিলে তা শসা অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে শসা খাওয়া বন্ধ করা উচিত এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রস্রাব বৃদ্ধির প্রভাব
শসা প্রাকৃতিকভাবে ডিউরেটিক, অর্থাৎ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়াতে পারে। যাদের আগে থেকেই ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা আছে বা রাতে বারবার প্রস্রাব করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে শসা সেই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের ব্যক্তিদের শসা খুব সীমিত পরিমাণে খাওয়া বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।
নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে সাবধানতা
শসা শরীর ঠান্ডা করে এবং রক্তচাপও কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। তাই যাদের আগে থেকেই লো ব্লাড প্রেশার রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে শসা অতিরিক্ত খেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অবসাদ বোধ হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শসা সীমিত পরিমাণে খাওয়াই সর্বোত্তম।
আরও পড়ুন
শীতে বেশি চা পান কি বাড়ায় হাঁটুর ব্যথা? কী বলছেন চিকিৎসকেরা
ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষের জন্য ঝুঁকি
যাদের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত কম থাকে, হাত-পা বরাবর ঠান্ডা থাকে বা পেট ঠান্ডা হয়ে থাকে, তাদের জন্য শসা উপযোগী নয়। শসার ঠান্ডা প্রভাব তাদের শারীরিক ভারসাম্য আরও নষ্ট করতে পারে।
আরও পড়ুন
স্বপ্নে শনিদেবের বার্তা: কোন চার লক্ষণ জানাবে তাঁর বিশেষ কৃপা?
উপসংহার
শসা যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনই কিছু মানুষের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। তাই যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে—যেমন হজমের সমস্যা, লো প্রেসার, সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি বা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা—তাদের শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শসা খাওয়াই উত্তম।
আরও পড়ুন
শীতে রুক্ষ চুলের সমাধান: নারকেল তেল ও পেঁয়াজের রসে মিলবে ঘন, কালো, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল