বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণের পর পুরো ইন্ডাস্ট্রি যখন তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড়ে গেল ভিলে পার্লের শ্মশানে, তখন আবার সামনে উঠে এল অভিনেতার বহুদিনের অভিমান। বছর দুয়েক আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্র স্পষ্ট অভিযোগ করেছিলেন— দেওল পরিবার কখনওই বলিউডের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান পায়নি। খান-কাপুরদের মতোই হিন্দি ছবির ঐতিহ্য, ব্যবসা ও দর্শকের ভালবাসা ধরে রাখায় যে পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য, তাঁদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ— তাঁর দাবি অনুযায়ী— কখনওই ঠিকমতো হয়নি।
২৩ সালের সাক্ষাৎকার— সাফল্যের মাঝেই ক্ষতচিহ্ন
২০২৩ সালে ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’-র সাফল্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছিলেন ধর্মেন্দ্র। শাবানা আজমির সঙ্গে তাঁর অনস্ক্রিন চুম্বন দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিল, আর তরুণ প্রজন্ম আবার আবিষ্কার করেছিল ‘চির-চার্মিং হি ম্যান’-কে। কিন্তু প্রশংসার বন্যা বয়ে গেলেও, ঠিক সেই সময়েই ধর্মেন্দ্র এক সাক্ষাৎকারে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অভিনেতার কথায়, বক্স অফিসে একাধিকবার সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও— তিনি, সানি দেওল বা ববি দেওল— কেউই কখনও বলিউড থেকে সেই সম্মান বা স্বীকৃতি পাননি, যা তাঁদের প্রাপ্য ছিল। ধর্মেন্দ্রর অভিমান ছিল, তাঁর দুই ছেলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে হিট ছবি দেওয়ার পরও ইন্ডাস্ট্রির কেউ তাদের অবদান উল্লেখ করেন না। “আমরা নিজেদের প্রচার নিজেরা করি না,”— বলেছিলেন তিনি।
“সানি দু’দু’বার ব্লকবাস্টার দিয়েছেন, তবুও কখনও নিজের ঢাক নিজে বাজায়নি। ইন্ডাস্ট্রিও আমাদের নিয়ে তেমন কিছু বলেনি।”
‘সত্যকাম’-এর ব্যথা আজও তাজা
ধর্মেন্দ্রর আক্ষেপের আর-একটি বড় জায়গা ছিল তাঁর অভিনয়জীবনের সেরা ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম— ১৯৬৯ সালের ‘সত্যকাম’। শর্মিলা ঠাকুর, সঞ্জীব কুমার, অশোক কুমারের মতো তারকারা অভিনীত এই ছবি আজও সিনেমা ইতিহাসে এক মূল্যবান সম্পদ। অথচ ধর্মেন্দ্রর কথায়,
“এমন একটি ছবির জন্যও কোনওদিন কোনও পুরস্কার পাইনি।”
আবেগ আর তিক্ততার মিশ্রণে তিনি জানিয়েছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি হয়তো কখনওই তাঁর ও তাঁর পরিবারের অবদানকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়নি।
দর্শকের ভালবাসাই শেষ কথা
তবে প্রতিটি কথার শেষে অভিনেতা আবারও বিনয়ী সুরে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ভক্তদের ভালবাসাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে কতটা স্বীকৃতি দিল, তা তাঁর কাছে কখনওই শেষ কথা নয়।
“আমাদের পরিবার প্রচারবিমুখ। কাজই আমাদের পরিচয়। দর্শক আমাদের ভালোবাসে— সেটাই যথেষ্ট,” বলেছিলেন তিনি।
প্রয়াণে ফের মানসপটে পুরোনো অভিমান
ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণ যেন তাঁর সেই অভিমানী কথাগুলিকে নতুন করে গুরুত্ব দিয়েছে। তাঁর শেষযাত্রায় বচ্চন, শাহরুখ, আমির, সলমন— এমন বহু তারকা উপস্থিত থাকলেও প্রশ্ন জাগছে— সত্যিই কি দেওল পরিবারকে বলিউড কখনও যোগ্য সম্মান দেয়নি?
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যাঁরা দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, অথচ সিনেমা-রাজনীতির অন্দরমহলে যাঁরা বারবার উপেক্ষিত— ধর্মেন্দ্রর অভিযোগ কি সেই অদৃশ্য ক্ষমতার রাজনীতির দিকেই ইঙ্গিত করে?
আরও পড়ুন
ধর্মেন্দ্রর ৫০০ কোটির সাম্রাজ্য: কেন কিছুই পাচ্ছেন না হেমা মালিনী?
এ প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু একটি কথা স্পষ্ট— তাঁর অসীম জনপ্রিয়তার আড়ালে যে ব্যথা জমে ছিল, তা আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে আরও গভীরভাবে আলোচিত হচ্ছে।
ধর্মেন্দ্র হয়েছেন অমর— স্মৃতিতে, পর্দায়, আর অভিমানী কথাগুলোর মধ্যেও।
