বাড়ির ঠাকুরঘর বা গৃহমন্দিরকে শুভশক্তির কেন্দ্র বলা হয়। এই স্থান শুধু দেবতার আরাধনার জায়গাই নয়, বরং বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি বজায় রাখার অন্যতম মূল উপাদান। তাই এর শুচিতা, পরিবেশ এবং পবিত্রতা রক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশ্বাস করা হয়, এই স্থান অশুচি হলে বা প্রবেশের নিয়ম না মানা হলে বাড়িতে অশান্তি, মানসিক চাপ ও দুর্ভাগ্যের সৃষ্টি হতে পারে। সেই কারণেই ঠাকুরঘরে প্রবেশের আগে কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
১. হাত-পা ও মুখ ধুয়ে নিন
ঠাকুরঘরে প্রবেশের আগে শরীর এবং মনের পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। বাইরে থেকে এসে ধুলো-ময়লা লেগে থাকে, যা পুজোর স্থানের শুদ্ধতা নষ্ট করতে পারে। তাই হাত-পা ও মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে শরীর সতেজ থাকে এবং মনও পরিষ্কার হয়। যদি পরিস্থিতির কারণে জল পাওয়া কঠিন হয়, তবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হাত-পা মুছে নেওয়াও ভালো।
২. শান্ত মনে মন্দিরে প্রবেশ করুন
ঠাকুরঘরের পরিবেশ পবিত্র এবং শান্ত। তাই এখানে প্রবেশের আগে মনকে স্থির করা জরুরি। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ দূর করুন। তাড়াহুড়ো, রাগ বা উদ্বেগের মধ্যে প্রার্থনা করলে একাগ্রতা নষ্ট হয় এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায় না। শান্ত মনের প্রার্থনা শক্তি ও ইতিবাচকতা বাড়ায়।
৩. খালি পায়ে ঢোকা বাধ্যতামূলক
জুতো বাড়ির বাইরে বা নির্দিষ্ট স্থানে খুলে রাখা উচিত। জুতোর মাধ্যমে ধুলো-ময়লা মন্দিরে ঢুকে পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে। খালি পায়ে ঠাকুরঘরে গেলে মাটির সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়, যা মানসিক স্থিতি ও ভক্তির অনুভূতি বাড়ায়। বহু ধর্মীয় শাস্ত্রে খালি পায়ে মন্দিরে প্রবেশ করাকে একান্ত জরুরি বলা হয়েছে।
৪. পরিচ্ছন্ন ও সরল পোশাক পরুন
মন্দিরে প্রবেশের সময় পরিচ্ছন্ন ও শুচি পোশাক পরা উচিত। খুব দামি পোশাকের প্রয়োজন নেই, তবে পরিষ্কার ও আরামদায়ক পোশাক পরা জরুরি। অনেকেই পুজোর সময় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে পছন্দ করেন—তা আরও শুভ বলে মনে করা হয়। পোশাকের শুদ্ধতা মানসিক শুদ্ধতারও প্রতীক।
৫. মোবাইল ফোন দূরে রাখুন
ঠাকুরঘর শান্ত ও ঈশ্বরচিন্তার জায়গা। তাই মোবাইল ফোনের শব্দ বা নোটিফিকেশন মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। পুজোর আগে ফোন অফ বা সাইলেন্ট মোডে রাখা উচিত। যতটা সম্ভব ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখা ভালো। মনোসংযোগ বজায় থাকলেই প্রার্থনা সফল হয় এবং ঈশ্বরের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি হয়।
আরও পড়ুন,
শুক্লা নবমীতে হর্ষণা যোগ: কোন রাশির ভাগ্যে অর্থলাভ, কারা থাকবেন সাবধান—আজকের রাশিফল ২৯ নভেম্বর ২০২৫
শেষ কথা
ঠাকুরঘর শুধুমাত্র মূর্তি বা ছবি রাখার জায়গা নয়; এটি বাড়ির আত্মিক শক্তির উৎস। তাই এর প্রতি সম্মান ও ভক্তি দেখানো প্রয়োজন। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললে বাড়িতে শান্তি, সৌভাগ্য এবং ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব এই নিয়মগুলি মেনে চলা, যাতে মন্দিরের শুদ্ধতা অটুট থাকে এবং ঘরে মঙ্গল বজায় থাকে।