বর্তমান প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবনে হেডফোন বা ইয়ারফোন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। চলার পথে হোক বা কাজে, গান শোনা, অনলাইন মিটিং বা ফোনালাপ—সব ক্ষেত্রেই আমরা নির্ভর করি এই ছোট ডিভাইসের উপর। কিন্তু অজান্তেই এই অভ্যাস আমাদের শ্রবণশক্তির জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই জানেন না—কত ডেসিবেলে শব্দ শোনা নিরাপদ, কিংবা টানা কতক্ষণ ইয়ারফোন ব্যবহার করা যায়। এর ফলেই ঘটে অদৃশ্য কিন্তু মারাত্মক ক্ষতি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গান শোনা বা অডিও শোনার সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখা সবচেয়ে ভালো। খুব প্রয়োজন হলে ৬০-৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত সহনীয়, কিন্তু ৮৫ ডেসিবেল অতিক্রম করলেই তা বিপজ্জনক শব্দ হিসেবে বিবেচিত হয়। আরও বেশি ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হয় যখন শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের উপরে পৌঁছায়। তখন ক্ষতি ঘটে তৎক্ষণাৎ, এবং তা অনেক সময় স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
কান মানবদেহের অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। কানের ভেতরে অবস্থিত ককলিয়া শব্দ তরঙ্গ গ্রহণ করে এবং এর ভেতরের সূক্ষ্ম লোম কোষগুলো শব্দ সংকেতকে মস্তিষ্কে পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে উচ্চস্বরে শব্দ শুনলে এই লোম কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই কোষগুলো একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা আর পুনরুদ্ধার হয় না। ফলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমতে শুরু করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় নয়েজ-ইনডিউসড হিয়ারিং লস—এবং দুঃখজনকভাবে এর কোনও কার্যকর চিকিৎসা নেই।
এই ঝুঁকির মধ্যেও সচেতন থাকলে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন একটি সহজ নিয়ম অনুসরণ করতে—যা পরিচিত ‘৬০/৬০ রুল’ নামে। এই নিয়ম অনুযায়ী:
*ভলিউম কখনোই ডিভাইসের সর্বাধিক মাত্রার ৬০%-এর বেশি হওয়া উচিত নয়।
*একটানা ৬০ মিনিটের বেশি হেডফোন ব্যবহার করা যাবে না।
*কানকে সময় দিন—প্রতি ঘণ্টায় অন্তত কয়েক মিনিট ইয়ারফোন খুলে বিশ্রাম নিন।
এ ছাড়া নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করলে বাইরের শব্দ কমে যাওয়ায় ভলিউম কম রেখেও পরিষ্কার শোনা সম্ভব। যারা নিয়মিত হেডফোন ব্যবহার করেন, তাদের প্রতি বছর অন্তত একবার কানের শ্রবণক্ষমতা পরীক্ষা করানো জরুরি।
হেডফোন আমাদের জীবনে সুবিধা এনে দিয়েছে ঠিকই, তবে সচেতন না হলে এটি নিঃশব্দে কেড়ে নিতে পারে আমাদের শ্রবণশক্তি। তাই আজ থেকেই ৬০/৬০ নিয়ম মেনে নিরাপদ শ্রবণ অভ্যাস গড়ে তুলুন। কান সুস্থ থাকলে জীবনই হবে আরও সুরেলা।
আরও পড়ুন
ওজন কমানো ও মিষ্টির ইচ্ছেপূরণ—দই-মাখানার পুডিংই হতে পারে স্বাস্থ্যকর সমাধান
