অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসকারী ২৭ বছর বয়সি ক্লউদিয়া রাফিনের জীবনে ঘটে গেল এমন এক ঘটনা, যা সৌন্দর্যচর্চার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে। মাসে একবার বিউটি পার্লারে যাওয়া তাঁর অভ্যাস ছিল। নিয়ম করে ম্যানিকিওর করাতেন তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালের ভ্যালেন্টাইন্স ডের ঠিক আগে করা সেই ম্যানিকিওরই তাঁর জীবন ওলটপালট করে দেয়।
ম্যানিকিওর করিয়ে স্যালোঁ থেকে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্লউদিয়া। হঠাৎই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। বন্ধু তৎক্ষণাৎ তাঁকে সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর শরীরে সেপসিসের মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিন রাতেই ভর্তি করা হয় তাঁকে।
পরদিন সকালে চিকিৎসকেরা দেখতে পান, তাঁর হাতের বুড়ো আঙুল ফুলে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে। বুড়ো আঙুল থেকে ঘাড় পর্যন্ত লাল রেখার মতো দাগ ছড়িয়ে পড়তে দেখে ধারণা করা হয়, তিনি লিম্ফাঞ্জাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন—যা অত্যন্ত দ্রুত লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ছড়িয়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে তাঁর আঙুল কালো হয়ে যেতে শুরু করে, হাতের রঙও বদলে যায়। এক ঘণ্টার ব্যবধানে অবস্থার এত অবনতি দেখে অস্ত্রোপচার ছাড়া আর উপায় ছিল না।
টানা একমাস হাসপাতালে কাটাতে হয় ক্লউদিয়াকে। সেপসিসের যন্ত্রণা তিনি ‘নরকযন্ত্রণা’ বলে বর্ণনা করেছেন। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট ছ’টি অস্ত্রোপচার হয় তাঁর শরীরে, সেলাই পড়ে ৪৮টি, উপরন্তু করতে হয় স্কিন গ্র্যাফ্ট। শেষপর্যন্ত নখের একটি বড় অংশ এবং আঙুলের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু কেটে বাদ দিতে হয়। প্লাস্টিক সার্জারি করানো হলেও আগের মতো আঙুল ব্যবহার করতে পারেন না তিনি।
ঘটনার জন্য স্যালোঁর পর্যাপ্ত স্টেরিলাইজেশন ও পরিচ্ছন্নতার অভাবকেই দায়ী করছেন ক্লউদিয়া। তিনি এখন সক্রিয়ভাবে মানুষকে সতর্ক করছেন—পার্লারে কোনো পরিষেবা নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করতে হবে যন্ত্রপাতি ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে কি না, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন কিনা। নিয়মিত ম্যানিকিওর করান এমন সকলের প্রতি তাঁর অনুরোধ—কিউটিকল কাটিং, রেজর স্ক্র্যাপিং বা ধারালো যন্ত্র ব্যবহারের আগে ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিচ্ছন্ন যন্ত্রপাতি থেকে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ খুব সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে তা সেপসিসে পরিণত হয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণঘাতী হতে পারে। জ্বর, ঠান্ডা লাগা, বিভ্রান্তি, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস অথবা রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ক্লউদিয়া চান, তাঁর অভিজ্ঞতা যেন অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হয়। নিজের সহ্য করা যন্ত্রণার কথা মনে করে তিনি বলেন—“যেন আর কেউ আমাকে যেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি, তেমন অবস্থায় না পড়েন।”
আরও পড়ুন,
প্রেশার কুকারে মিনিটেই সস্-সহ পাস্তা: তাড়াহুড়োর রান্নায় নতুন কৌশল
