অন্ধকার গুহায় আটকে যান যুবক, তাকে রেখেই গুহা সিল করে দেয় আমেরিকার প্রশাসন

একটি গুহা যা বদলে দিয়েছে একটি মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বাকিদের জীবন। আর সেই গুহা একসময় আমেরিকার প্রশাসনের তরফে চিরতরে মানুষের নাগাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সেই গুহাতে জীবন্ত অবস্থায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। আমেরিকার উটা রাজ্যের রুক্ষ ভূমিতে রয়েছে একটি গুহা। সেই গুহাটির নাম নাটি পাটি। পর্যটকদের কাছে গুহাটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

অনেকেই গুহাটিতে ভিতরে যেতেন এবং বাইরে বেরিয়ে আসতেন। যদিও গুহাটির ভিতরে ঢুকে ফের বাইরে বেরিয়ে আসা ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। গুহার সবথেকে আকর্ষণীয় জিনিস ছিল এটির মধ্যে থাকা হাইড্রো থার্মাল প্যাসেজ। এছাড়া রয়েছে এটির মধ্যে সরু গলির মত একাধিক রাস্তা। আর এই গুহা দেখার জন্য এখানে আসতেন প্রচুর পর্যটক। তবে তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি আসতেন কলেজের পড়ুয়ারা।

তেমনই এক যুবক ছিলেন বছর ২৬-এর এডওয়ার্ড জোনস্। সেই তরুণকে প্রাণে বাঁচাতে ব্যর্থ হয় স্থানীয় প্রশাসন। আমেরিকার উদ্ধারকারী দলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, গুহায় আটকে পড়ার পর ২৬ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচেছিলেন ওই যুবক। তাকে বের করে আনার সমস্ত চেষ্টা করা হলেও সবকিছু বিফলে যায়। একসময় শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৪শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ গুহায় পা রাখেন জন।

তিনি সেদিন ১১ জনের একটি দলের সঙ্গে ছিলেন। এরপর ওইদিন ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ গুহার ভিতরের সরু গলিপথে আটকে যান জন। সেই গলির নাম ববস্ পুশ। এই গুহায় রাস্তাগুলি এত সরু যে হামাগুড়ি দেওয়া ছাড়া এগোনোর উপায় নেই। সেভাবে এগোতে গিয়ে হঠাৎই একটি উলম্ব গর্তে মাথা পিছলে শরীরের উপরের অংশ ঢুকে যায়। গুহার প্রবেশ দ্বার থেকে ৭০০ ফুট দূরে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫০ ফুট গভীরে সেই গর্ত।

ওই তরুণকে জীবিত অবস্থায় বের করে আনার একাধিক চেষ্টা করে আমেরিকার স্থানীয় প্রশাসন। একাধিক উদ্ধারকারী দলকে কাজে লাগানো হয়। উদ্ধার করার সময় একটি মেশিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে ফের গর্তের মধ্যে ঢুকে যান জন। তাকে জীবিত উদ্ধারের আশা শেষ হয়ে যায়৷ ২৫শে নভেম্বর জনের কাছে পৌঁছোয় উদ্ধারকারী দল। ততক্ষণে জনের প্রাণ শেষ হয়ে গিয়েছে।

পরে জানা যায়, জনের দেহ ওই গুহাতে ১৬০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি কোনে ঝুলেছিল। শেষমেষ জনের দেহ গুহা থেকে বাইরে বের করে আনার কথা হলেও সেটি যথেষ্ট বিপদসংকুল হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। শেষমেষ জনের দেহ গুহার ভিতরে রেখে গুহাটি চিরতরে বন্ধ করে দেয় আমেরিকার প্রশাসন। ২০০৯ সালে নাটি পাটি গুহার প্রবেশ দ্বার কংক্রিট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে রেখে গুহায় চিরতরে হারিয়ে যান জন।

error: Content is protected !!