উড়িষ্যা আর ঘূর্ণিঝড় এখন যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে গিয়েছে। আবারো একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে এই রাজ্যে। এর জন্য আবারো অনেক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে ওড়িশা উপকূলী অঞ্চলগুলিতে। এর মধ্যে একটি হল জগৎসিংহপুর। ‘দানা’ যত উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ততই ভয় বেড়ে চলেছে জগৎসিংহপুরের এরসামা ব্লকের পরমপুর গ্রামের।
এই গ্রামটি সমুদ্র থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে উড়িষ্যার বুকে যখন ‘সুপার সাইক্লোন’ আছড়ে পড়েছিল, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জগৎসিংহপুর। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় পদমপুর গ্রাম বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল এই ‘সুপার সাইক্লোন’- এর জন্য। অনেক প্রাণ হারিয়েছিল এই গ্রামে। বহু গ্রামবাসী সমুদ্রের জলে ভেসে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে এই ঘূর্ণিঝড়ে যেসব জেলাগুলিতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছিল জগৎসিংহপুরেই। এই জেলায় ‘সুপার সাইক্লোনের’ মৃত্যু হয়েছিল ৮১১৯ জনের। এরপরেই ছিল কটক ৪৭১ জন এবং কেন্দ্রাপাড়া ৪৬৯ জন।
আবারো একটি ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ধেয়ে আসতেই ১৯৯৯ সালের স্মৃতি মনে পড়ে গেছে জগৎসিংহপুরের পরমপুর গ্রামে। গোটা গ্রাম ভয়ে রয়েছে। তাই সমুদ্রের ‘দানা’ দানা বাঁধার সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই এই গ্রাম এবং জগৎসিংহপুরের সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চল গুলির লোকজনের ঘুম উড়ে গেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই না ঘুমিয়ে রাত কাটাচ্ছে তারা।
পরমপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ” ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। সেই স্মৃতি আজও মনের কোণে রয়েছে। চোখের সামনে প্রিয়জনদের মৃত্যু দেখেছি। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ এসে ভেঙে দিল বাড়ির পর বাড়ি। অনেকেই আবার গাছে ওঠে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।” আরো একটি ঘূর্ণিঝড় আসার জন্য মৃত্যু ভয় তাদের মনে দেখা দিয়েছে। তার কথায়, আবারো একটি ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। খুব ভয়ে আছি আমরা। আগের ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়লে কেঁপে উঠছি। কিভাবে এই ঘূর্ণিঝড় থেকে স্বস্তি পাবো জানিনা।”
আরো কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, এই পরিস্থিতি কাটানোর জন্য ত্রাণশিবিরে থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের কথায়, “রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সমুদ্রের ঢেউ এসে যদি আবারো ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সেই ভয়ে সারারাত জেগে বসে থাকছে।”
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি নিম্নচাপ আরো ঘনীভূত হয়ে বুধবারে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবারের রাত থেকে বৃহস্পতিবার এর সকালের মধ্যে উড়িষ্যা পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর উপকূলের মধ্য দিয়ে স্থলভাগের প্রবেশ করতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। আছড়ে পড়ার সময় এটার গতিবে হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দামকা হাওয়ার সর্বাধিক গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় ১২০ কিমি।