পশ্চিম বর্ধমান জেলার মাধ্যমিক ছাত্রীদের মধ্যে সে সেরা। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪ (৯৬.২৯ শতাংশ)। স্কুলের মধ্যে সে প্রথম। কিন্তু যে পরীক্ষার্থীকে নিয়ে পরিবারের আনন্দে মেতে থাকার কথা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গর্বিত হওয়ার সময়, সেই পরিবার, সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চোখে জল। কিন্তু কেন? শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর সপ্তাহ দুই আগে মারা গিয়েছে বছর ১৬-র থৈবি মুখোপাধ্যায় (জন্ডিসে ভুগে)। মাধ্যমিকের ফল বেরনোর পরে নাতনির ছবি হাতে নিয়ে হাউহাউ করে কেঁদেফেললেন ঠাকুরদা-ঠাকুরমা। মনের দুঃখে বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়েছেন বাবা-মা।
আসানসোল উমারানি গড়াই স্কুলের ছাত্রী থৈবি জন্ডিসে মারা গিয়েছে গত ১৬ এপ্রিল। আগাগোড়া পরীক্ষায় প্রথম হত থৈবি। মাধ্যমিকেও স্কুল ‘টপার’ থৈবি। পরিবার সূত্রে খবর, থৈবি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল পরীক্ষার আগে। শুধুমাত্র বাংলা পরীক্ষার দিন সে সুস্থ ছিল। তার পর অসহ্য পেটের যন্ত্রণা হয় তাঁর, সেই অবস্থাতেই পরীক্ষা দিয়েছে সে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল মেয়েটি বাংলায় পেয়েছে ৯৯। ভৌতবিজ্ঞানে ৯৭, গণিতে ৯৮, ইতিহাসে ৯৫, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, এবং ভূগোলে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৫। স্কুলের শিক্ষিকাদের দাবি, “থৈবির এতটাই মেধা ছিল। সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিতে পারলে হয়তো ও রাজ্যে প্রথম হত।”
পেশায় একজন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক থৈবির বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। সংসার সামলান মা পিউ মুখোপাধ্যায় । তাঁরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে মেয়ের জন্ডিস ধরা পড়েছিল। চিকিৎসার জন্য থৈবিকে নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে ভেলোর গিয়েছেন। চিকিৎসায় প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হবে এমনটা জানিয়েছিল চিকিৎসকেরা। এগিয়ে আসেন স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শহরবাসী। চিকিৎসার জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জোগাড় করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি থৈবিকে।
পাড়া-প্রতিবেশীর প্রত্যেকেই এটা আশা করেছিলেন, মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে এক থেকে দশের মধ্যে জায়গা করে নেবে থৈবি। অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে এক থেকে দশের মধ্যে জায়গা না করতে পারলেও স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর থৈবি পেয়েছে। জেলায় ছাত্রীদের মধ্যে সে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।
মেয়ের পরীক্ষার ফল ভাল হবে তা জানতেন থৈবির বাবা-মা। কিন্তু কাকে নিয়ে আনন্দ হবে! তাই ফলপ্রকাশের দিন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন দম্পতি। ফলপ্রকাশের দিন বাড়িতে ছিলেন থৈবির ঠাকুরদা-ঠাকুরমা। নাতনির ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এক প্রতিবেশীর কথায়, মেয়েটির পরীক্ষার ফল শুনে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। দেখলাম, থৈবির ছবি আঁকড়ে বসে রয়েছে ওর ঠাকুরমা। কান্নায় ভেঙে পড়েছে ওর গোটা পরিবার।