জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। শুক্রবার রাতের ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭ বছরের স্থানীয় দর্জি মহম্মদ শফি—যিনি থানায় পুলিশের কাজেই উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের এই করুণ মৃত্যুতে শোকের সঙ্গে ক্ষোভও ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়।
পরিবারের অভিযোগ, হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থানায় আনার পর পুলিশ ছোট ছোট ব্যাগে সেই বিস্ফোরক ভরার পরিকল্পনা করে। ব্যাগ সেলাইয়ের জন্যই থানায় ডেকে পাঠানো হয় পরিচিত দর্জি শফিকে। লম্বা সময় ধরে তিনি থানায় কাজ করছিলেন। শুধু রাতের খাওয়ার জন্যই তাঁকে বাড়ি যেতে দেওয়া হত। সেদিনও খাওয়া শেষে ফের কাজে ফিরেছিলেন তিনি—যেটাই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের শেষ যাত্রা।
শফির কন্যা বাবাকে সেদিন রাতে যেতে নিষেধ করেছিলেন ঠান্ডার কারণে। কাতর স্বরে বলেছিলেন, “বাবা, আজ আর যেও না।” কিন্তু কাজের দায়ে শফি ফের থানায় ফিরে যান। পরিবারের কথায়, “তিনি পুলিশকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। ভাবতেও পারিনি এভাবে ফিরবেন।”
বিস্ফোরণের মুহূর্তে গোটা থানা কেঁপে ওঠে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে দেহাংশ। শফির পরিবার ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে খুঁজে তবেই তাঁর দেহের অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
তিন সন্তান, বৃদ্ধ মা–বাবা এবং স্ত্রীকে রেখে চিরবিদায় নিলেন শফি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটির মৃত্যুতে ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সংকটে পরিবার।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন, তবুও শফির পরিবারের প্রশ্ন—“যদি উনি পুলিশকর্মী হতেন, সরকার কি শুধু এককালীন টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে দিত? তিনি তো পুলিশের কাজেই মারা গেছেন।”
তাদের দাবি, দর্জিকে ‘নন-অফিশিয়াল ওয়ার্কারের’ বদলে সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য দিতে হবে। পাশাপাশি, বসতি এলাকায় বিস্ফোরক মজুত রাখা এবং সাধারণ নাগরিককে বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত করার বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিবার।
নওগামের এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি শুধু একটি প্রাণই কাড়েনি, সামনে এনে দিয়েছে নিরাপত্তা অব্যবস্থা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার গুরুতর প্রশ্নও।
