রাতের আকাশে উজ্জ্বল সপ্তর্ষি: পৌরাণিক সাত মহর্ষির পরিচয় ও ঐতিহ্য

রাতের আকাশে যে সাতটি উজ্জ্বল তারা ‘সপ্তর্ষি মণ্ডল’ নামে পরিচিত, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতীয় পুরাণের অত্যন্ত সম্মানিত সাত মহর্ষির স্মৃতি। প্রাচীন শাস্ত্রে বর্ণিত এই ঋষিরা শুধু জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার ধারকই নন, সনাতন ধর্মের ভিত্তি রক্ষার দায়িত্বও তাঁদের উপর অর্পিত। পুরাণ অনুযায়ী, স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মার মন থেকে জন্ম নিয়েছিলেন এই সাত ঋষি, যাঁদের উপস্থিতি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভারসাম্য রক্ষার প্রতীক। বিশ্বাস করা হয়, দেহত্যাগের পর এঁরা জ্যোতিষ্ক রূপে আকাশ মণ্ডলে অবস্থান করছেন, যারই প্রতিফলন সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল।

কারা এই সাত ঋষি?

বৈদিক যুগের সর্বশাস্ত্রজ্ঞ, জ্ঞান-তপস্যায় পারদর্শী এই সাত মহাপুরুষই সপ্তর্ষি নামে পরিচিত। মানবসভ্যতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং ধর্মের মূলনীতিকে অটুট রাখা তাঁদের প্রধান কর্তব্য ছিল। বেদের উল্লেখ অনুযায়ী এই সাত ঋষি হলেন—
কাশ্যপ, অত্রি, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, গৌতম, জমদগ্নি এবং বশিষ্ঠ।

সপ্তর্ষিদের পরিচয়

ঋষি কাশ্যপ
সপ্তর্ষির মধ্যে কাশ্যপকে অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী হিসাবে ধরা হয়। তাঁর স্ত্রীদের থেকেই পৃথিবীর দেবতা, দানব, মানুষ ও প্রাণীকূলের জন্ম হয়েছে বলে পুরাণে উল্লেখ আছে। ব্রহ্মার মানসপুত্র মারিচির পুত্র কাশ্যপ ছিলেন মহান তত্ত্বজ্ঞ, যাঁর শিষ্যরা বিশ্বসৃষ্টির নানা দিককে এগিয়ে নিয়েছিলেন।

ঋষি অত্রি
ব্রহ্মার দশ মানসপুত্রের অন্যতম অত্রি ছিলেন সত্যযুগের বিখ্যাত ঋষি। তাঁর স্ত্রী অনসূয়া পৌরাণিক কাহিনিতে নৈতিকতা ও পবিত্রতার প্রতীক। অত্রির আশ্রমেই বনবাসকালে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর পুত্র দত্তাত্রেয় ছিলেন যোগ, তত্ত্ব ও জ্ঞানচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ।

ঋষি ভরদ্বাজ
ভরদ্বাজ ছিলেন পুরাণ ও শাস্ত্র রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি আয়ুর্বেদের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র রচনা করেন। মহাভারতে বর্ণিত দ্রোণাচার্য তাঁরই পুত্র—যিনি পাণ্ডব ও কৌরবদের অস্ত্রবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন।

ঋষি বিশ্বামিত্র
রাজা থেকে মহর্ষি হয়ে ওঠা বিশ্বামিত্রের গল্প ভারতীয় পুরাণে অনন্য। তাঁরই রচনা গায়ত্রী মন্ত্র, যা হিন্দুধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্তোত্র। তপস্যার শক্তিতে তিনি জীবিত অবস্থায় ত্রিশঙ্কুকে স্বর্গদর্শন করিয়েছিলেন বলে পুরাণে উল্লেখ রয়েছে।

ঋষি গৌতম
গৌতমের স্ত্রী অহল্যার কাহিনি রামায়ণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অভিশাপে তিনি পাথর হয়ে থাকা অবস্থায় রামচন্দ্রের স্পর্শে পুনরায় মানবরূপে ফিরে আসেন। গঙ্গাকে ব্রহ্মাগিরি পর্বতে নিয়ে আসার কৃতিত্বও গৌতমের।

ঋষি জমদগ্নি
জমদগ্নির পুত্র পরশুরাম—যিনি নারায়ণের ষষ্ঠ অবতার। পুরাণে আছে, পরশুরাম ২১ বার পৃথিবীকে নিক্ষত্রিয় করেছিলেন, অর্থাৎ অত্যাচারী ক্ষত্রিয়দের দমন করেছিলেন। জমদগ্নি তপস্যা ও ব্রহ্মচর্চায় ছিলেন অতুলনীয়।

ঋষি বশিষ্ঠ
রাজা দশরথের চার পুত্র—রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্নের গুরু ছিলেন বশিষ্ঠ। রামায়ণের রঘুকূলের পারিবারিক পুরোহিত ও পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম, নীতি ও ন্যায়বিচারের শিক্ষায় তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।

রাতের আকাশে সপ্তর্ষি মণ্ডল

সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল মূলত ‘গ্রেট বিয়ার’ বা ‘উরসা মেজর’ নক্ষত্রপুঞ্জের অংশ। ভারতীয় উপমহাদেশে এই নক্ষত্রমণ্ডল যুগ যুগ ধরে দিকনির্ণয়, সময় গণনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি তারাকে পৃথক ঋষির নামে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা মানুষের আকাশজুড়ে পৌরাণিক ঐতিহ্যকে জীবন্ত রেখেছে।

আরও পড়ুন
প্রতিদিন গীতাপাঠের উপকারিতা: মন, মস্তিষ্ক ও জীবনের সমন্বয়ে এক অনন্য সাধনা

সুতরাং, রাতের আকাশে ঝলমলে সাতটি তারা শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের সৌন্দর্যই নয়, বহন করে হাজার বছরের পুরাণ, ইতিহাস ও ধর্মীয় উত্তরাধিকার। সপ্তর্ষিরা ভারতীয় সভ্যতার জ্ঞানজ্যোতি, যাঁদের নাম আজও সসম্মানে উচ্চারিত হয়।

আরও পড়ুন
Vastu: উন্নতির পথে এগোবে ২০২৬, নতুন বছর শুরুর আগে ঘর থেকে দূর করুন ছয় অশুভ বস্তু

শুধু হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় না, জোয়ান খেলে শরীরের অনেক সমস্যা নিবারণ হয় মুখরোচক বাদাম চিক্কি খেতে দারুন, বাড়িতেই তৈরী হবে, জানুন রেসিপি এইভাবে তেজপাতা পোড়ালে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে 5 Best Night Creams ৪ মাসের শিশু ২৪০ কোটির মালিক