আকাশযুদ্ধের ভবিষ্যৎ যে নজিরবিহীনভাবে বদলে যেতে চলেছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল তুরস্ক। ইতিহাসে প্রথমবার কোনও দেশ চালকবিহীন জেট-ইঞ্জিনচালিত যুদ্ধবিমান—অর্থাৎ ফাইটার ড্রোন—ব্যবহার করে আকাশে উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুতে ‘এয়ার-টু-এয়ার’ বা আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে সফলভাবে ধ্বংস করল। এই সফল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ড্রোন যুদ্ধব্যবস্থায় নতুন অধ্যায় রচনা করল তুরস্ক।
দেশটির সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্বদেশি প্রযুক্তিতে নির্মিত বায়রাক্টর কিজ়িলেলমা ফাইটার ড্রোন থেকে ‘গোকডোগান’ আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে জেট-ইঞ্জিনচালিত উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের সক্ষমতা আগে কখনও কোনও মানবহীন যুদ্ধবিমান অর্জন করতে পারেনি, ফলে বিশ্ব সামরিক পরিমণ্ডলে এটি এক যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরীক্ষা পরিচালনা করা হয় তুরস্কের উত্তর উপকূলের সিনোপ ফায়ারিং রেঞ্জে। নজরদারির জন্য আকাশে ছিল মার্কিন নির্মিত F-15 যুদ্ধবিমান। মূল পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয় কৃত্রিমভাবে উড়তে থাকা একটি জেট-ইঞ্জিন লক্ষ্যমাত্রা, যাকে কিজ়িলেলমা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সোজা গিয়ে বিধে।
গোকডোগান ক্ষেপণাস্ত্র এবং মুরাদ AESA রাডার, উভয়ই তুরস্কের তৈরি উন্নত সামরিক প্রযুক্তি। বিশেষ করে মুরাদ রাডার কিজ়িলেলমাকে দীর্ঘ-পাল্লার টার্গেট শনাক্তকরণ ও ট্র্যাকিংয়ের ক্ষমতা দেয়, যা এই মিশনের সাফল্যে ভূমিকা রেখেছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষক।
যদিও তুরস্কের সরকার পরীক্ষার বিস্তারিত প্রযুক্তিগত তথ্য প্রকাশ করেনি, মার্কিন সংবাদমাধ্যম CNN জানিয়েছে যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ। আকাশে উচ্চগতিতে চলমান জেট-ইঞ্জিনচালিত টার্গেটে মানবহীন বিমানের সফল আঘাত—এটি আধুনিক ড্রোনযুদ্ধে একটি অভূতপূর্ব মাইলফলক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধের কৌশলে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। মানবচালিত ফাইটার জেটের পরিবর্তে কম খরচে, কম ঝুঁকিতে এই ধরনের উন্নত ফাইটার ড্রোন শত্রুপক্ষের বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে। বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত স্থাপনা, কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও উচ্চ নিরাপত্তা—এই তিন মিলিয়ে কিজ়িলেলমা আগামী দিনে তুরস্কের সামরিক শক্তির অন্যতম স্তম্ভ হতে পারে।
আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে ৩৫ ওবিসি জনগোষ্ঠী বাদ দেওয়ার সুপারিশ NCBC-র
তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের দ্রুত অগ্রগতি এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে এমন সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নজর কাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অর্জন শুধু তুরস্ক নয়, বিশ্ব ড্রোন প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নতুন প্রতিযোগিতা শুরু করে দিল।
আরও পড়ুন
তাজ্জব সবাই! আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল মানবহীন যুদ্ধবিমান