বাঁকুড়ায় বাড়ি ধসে ঘোর-বিপত্তি, ঘটনাস্থলে মৃত্যু হল দু’জনের। বুধবার গভীর রাতে ইন্দাস নন্দীপাড়ায় আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে যায় ছিটেবেড়ার ওই বাড়ি। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন উজ্জ্বলা হাজরা (৫৫) নামের এক প্রৌঢ়া এবং তাঁর নাতি দেব কেওড়া, বয়স ১৫ বছর ।
বৃহস্পতিবার কাকভরে ঘটনাটি নজরে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইন্দাস ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং অন্য প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। স্থানীয় সূত্র মারফত খবর, সম্প্রতি উজ্জ্বলা (৫৫) ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ হাতে পেয়েছেন।
প্রকল্পের টাকা হাতে পেতেই নিজের কাঁচা বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন তিনি। ভিত খননের কাজ প্রায় শেষের দিকে। নতুন বাড়ি তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত উঠোনের এক পাশে থাকা ছিটেবেড়ার ঘরেই রাত্রি যাপন করছিলেন উজ্জ্বলা। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে বেড়াতে আসে নাতি দেব কেওড়া। বুধবার রাতে খাওয়াদাওয়ার সেরে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছিটেবেড়ার ঘরে শুতে যান উজ্জ্বলা। গভীর রাতে যখন দু’জনেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রয়েছে, তখনই আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাঁদের ঘরটি। যেহেতু তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন তাই ঘরের ধ্বংসস্তুপের নীচে চাপা পড়ে যান দু’জনই ফলে ঘটনাস্থলে তাঁদের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার সাতসকালে এলাকাবাসীদের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর তড়িঘড়ি ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে তার নীচ থেকে দু’জনের নিথর দেহ উদ্ধার করেন তাঁরা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইন্দাস থানার পুলিশ। এরপর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনা প্রসঙ্গে উজ্জ্বলার আত্মীয় কার্তিক হাজরা জানিয়েছেন, ‘কাকিমা বাংলার বাড়ি পাওয়ায় নিজের পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করছিলেন। ভিত খনন করা হয়েছিল। স্থানীয় একটি পুকুরের জল সেচ করে বের করা হচ্ছিল। আর সেই পুকুরের জল এসেই কাকিমার ঘরের ভিতে জমা হয়ে যায়। সেই জলেই ভিজে গিয়ে ছিটেবেড়ার দেওয়াল ভেঙে কাকিমা এবং তাঁর নাতির মৃত্যু হয়েছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত বাগদী বলেন, ‘গভীর রাতে বাড়িটি ধসে পড়েছে। বাড়ির মধ্যে নিজের নাতিকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন উজ্জ্বলা হাজরা। গভীর রাতে পাড়ার লোকজন কিছু বুঝতে পারেনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।’
ইন্দাসের বিডিও সুরেন্দ্রনাথ পতি ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই সময় মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ার কথা নয়। কিন্তু স্থানীয় একটি পুকুরের জল বার করার সময় সেই জল ঢুকে পড়ে ওই বাড়িতে। যার ফলেই বাড়ির দেওয়াল নরম হয়ে যায়, ফলে ধসে পড়েছে।” বিডিও আরও জানিয়েছেন, উজ্জ্বলা বাংলার ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকায় তিনি বাড়ি নির্মাণের কাজও শুরু করেছিলেন। নতুন বাড়ি তৈরি না-হওয়া পর্যন্ত তাঁকে স্থানীয় স্কুলে থাকার অনুরোধ করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু উজ্জ্বলা তা করেননি।