নভেম্বরের হালকা শীত যেন সকাল শুরু হতেই গায়ে জড়িয়ে থাকে আর তার সঙ্গে ঘরোয়া জীবনে বাড়িয়ে দেয় ছোট ছোট আনন্দ। তবে শীতের এই আমেজের আড়ালেই থাকে এক বড় দুশ্চিন্তা—রান্নার গ্যাসের বাড়তি খরচ। গরম জল, ঘন ঘন চা-কফি, গরম খাবারের চাহিদা—সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের খরচের তালিকায় শীতে যেন বাড়তি চাপ পড়ে।
কিন্তু একটু খেয়াল, কিছু পরিকল্পনা আর বেশ কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে।
ঢেকে রান্না করুন, কম খরচে তাড়াতাড়ি স্বাদ
রান্নায় গ্যাস বাঁচানোর সবচেয়ে সহজ কৌশল হলো—পাত্র ঢেকে রান্না করা।
গ্যাসের আঁচ বাড়ালেই রান্না দ্রুত হবে—এ ধারণা ভুল। বরং ঢেকে রান্না করলে কম আঁচেও খাবার দ্রুত সিদ্ধ হয়।
অল্প বা বেশি লোকের রান্না—যে ভাবেই হোক, এই এক নিয়মই গ্যাস বাঁচাতে কার্যকর।
ফ্লাস্ক রাখুন হাতের কাছে, সারাদিনের সঙ্গী
* শীত এলেই চা-কফির চাহিদা যেন বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
* প্রতিবার জল ফুটালে গ্যাসের খরচ বাড়বে নিশ্চিত। তাই—
* দিনের শুরুতেই একবার গরম জল ফ্লাস্কে ভরে রাখুন
* সারাদিন চা বা কফি বানাতে ফ্লাস্ক থেকে জল ব্যবহার করুন
* প্রয়োজনে টি-ব্যাগ ব্যবহার করুন
* রান্নায় যখন গরম জলের প্রয়োজন হবে, তখনও ফ্লাস্কের জল কাজে লাগাতে পারেন
* এতে গ্যাসের উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হবে।
বার্নার পরিষ্কার রাখুন—এটাই গ্যাস সাশ্রয়ের প্রধান চাবিকাঠি
সাধারণত ব্যস্ততার কারণে আমরা বার্নার পরিষ্কার করতে ভুলে যাই। সময়ের সঙ্গে তাতে ময়লা জমে বাড়তে থাকে কালো স্তর, যা জ্বালানির অপচয় ঘটায়।
কীভাবে বুঝবেন বার্নার পরিষ্কার নয়?
শিখা নীলের বদলে হলুদ বা কমলা হলে বুঝতে হবে ময়লা জমেছে।
পরিষ্কারের উপায়ঃ
গরম জল
ভিনিগার বা লেবুর রস
বেকিং সোডা
এগুলোর মিশ্রণে একটি পেস্ট তৈরি করে বার্নার ঘষে পরিষ্কার করলে শিখা ফের শক্ত ও নীল হবে, গ্যাসও কম খরচ হবে।
কম পদ রান্না করুন, সঠিক সময় বেছে নিন
বাঙালির ভুরিভোজে পদ না হলে চলে না। কিন্তু শীতে গ্যাস বাঁচাতে হলে কিছুটা সংযম জরুরি।
অল্প পদে রান্না করুন
রান্না শেষ করে খেতে বসার মাঝে বিরতি কম রাখুন
নইলে খাবার ঠান্ডা হয়ে ফের গরম করতে গ্যাসের বাড়তি অপচয় হবে
প্রেশার কুকার ব্যবহার করুন
কম সময়ে ও কম খরচে রান্নার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো প্রেশার কুকার। এতে গ্যাস ও সময় দুটোই বাঁচে।
স্নানের জলে গ্যাস বাঁচানোর উপায়
যাঁদের বাড়িতে গিজার নেই, তাঁদের শীতে ঘন ঘন গরম জল করতে হয়।
তাই—
বাড়ির সদস্যদের একসঙ্গে স্নানের সময় ঠিক করে নেওয়া উচিত
একবার বেশ কিছু জল গরম করলেই সবাই ব্যবহার করতে পারবেন
বারবার গ্যাস পুড়িয়ে জল গরম করার প্রয়োজন পড়বে না।
সব মিলিয়ে—গ্যাস সাশ্রয় আপনার হাতে
টানাটানির সময়ে সংসার চালাতে হলে খুঁটিনাটি সাশ্রয়ের পথেই ভরসা রাখতে হয়। আর রান্নাঘরেই রয়েছে সেই সাশ্রয়ের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
ঢেকে রান্না, পরিষ্কার বার্নার, ফ্লাস্কে গরম জল, কম পদ, প্রেশার কুকার—
এই সামান্য অভ্যাসই শীতে আপনার মাসিক গ্যাস বিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে।
শীতের আমেজ থাকুক, খরচ থাকুক নিয়ন্ত্রণে।
