বয়স বাড়া স্বাভাবিক হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই বয়সের ছাপ আগেভাগেই মুখে ফুটে ওঠে। অল্প বয়সেই ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা, ডার্ক স্পট, রুক্ষভাব বা ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। শুধু বাহ্যিক যত্ন নয়, ত্বকের বয়স বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ লুকিয়ে থাকে প্রতিদিনের খাবারদাবারে। পুষ্টিবিদদের মতে, কিছু সাধারণ খাবার শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, আর্দ্রতা কমায় এবং কোলাজেন ক্ষয়ে ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়। ফলে বেড়ে যায় অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ।
দেখে নেওয়া যাক—প্রতিদিনের কোন ৫ খাবার ত্বকের ক্ষতির প্রধান কারণ হতে পারে।
১. অতিরিক্ত চিনি: ত্বকের নীরব শত্রু
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে বেশি পরিমাণ চিনি প্রবেশ করলে ‘গ্লাইকেশন’ নামের একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। এই প্রক্রিয়ায় চিনি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেগুলিকে শক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফলে ত্বক হারায় স্বাভাবিক জেল্লা, দ্রুত তৈরি হয় বলিরেখা এবং ঝুলে পড়তে শুরু করে চামড়া।
চা–কফিতে অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টি, চকোলেট, প্যাকেট জুস—এসবেই থাকে প্রচুর ফ্রি সুগার ও কৃত্রিম মিষ্টি, যা ত্বকের ক্ষতি আরও ত্বরান্বিত করে।
২. ময়দা: রিফাইন্ড কার্বে ভরসা মানেই বিপদ
ময়দা বা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট হজমের পর প্রায় চিনির মতোই আচরণ করে। হঠাৎ ব্লাড সুগার বাড়িয়ে গ্লাইকেশন প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ঘটায়।
ফলে ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায়, ব্রণ বাড়তে পারে এবং অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।
নিয়মিত পাস্তা, কেক, বিস্কুট বা ময়দার রুটি খাওয়ার অভ্যাস ত্বকের কোষের ক্ষতি বাড়াতে পারে বলেই সতর্কতা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. ভাজাপোড়া ও ওভার-প্রসেসড খাবার: ট্রান্স ফ্যাটের দাপট
চিকেন ফ্রাই, শিঙাড়া, চিপস, প্যাকেট নুডলস—এসব খাবারে থাকে বিপজ্জনক ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত সোডিয়াম।
ট্রান্স ফ্যাট ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়
প্রদাহ বাড়ায়
সেল রিপেয়ারের গতি কমিয়ে দেয়
ফলে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক, রুক্ষ এবং ডি-হাইড্রেটেড। দীর্ঘদিন এই ধরনের খাবার খেলে ত্বকের বয়স অনেকটাই দ্রুত বাড়তে পারে।
৪. অতিরিক্ত কফি: ডিহাইড্রেশনের ফাঁদে ত্বক
যদিও কফিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকে—
ত্বক হয় পানিশূন্য, রাফ, উজ্জ্বলতা কমে যায়।
এ ছাড়া ঘন ঘন কফি খেলে ঘুম নষ্ট হতে পারে। কম ঘুম বা অনিয়মিত ঘুম ত্বকের বার্ধক্যের অন্যতম কারণ—এটি চিকিৎসকেরাও বারবার সতর্ক করে দেন।
৫. অতিরিক্ত নুন: ফুলে ওঠা মুখ ও দ্রুত ঢিলে ত্বক
সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে জল জমে যায়। ফলে—
চোখের নীচে পাফিনেস
মুখে ফোলা ভাব
দীর্ঘদিনে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়া
এই সমস্যাগুলি দেখা দেয়।
চিপস, আচার, বিস্কুট, রেডি স্যুপ বা প্যাকেট স্ন্যাকস—এসব খাবারে লবণের মাত্রা অনেকটাই বেশি থাকে। কাঁচা নুন খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
কীভাবে রোধ করবেন অকাল বার্ধক্য?
🔹 প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান
🔹 শাকসবজি, ফল, বাদাম ও ওমেগা–৩ খাবার অন্তর্ভুক্ত
🔹 প্রসেসড খাবার কমানো
🔹 পর্যাপ্ত ঘুম
🔹 সানস্ক্রিন ব্যবহার
🔹 স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইফস্টাইলে সামান্য পরিবর্তন আনলেই ত্বকের বয়স বাড়ার গতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। অল্প বয়সে বলিরেখা নয়, বরং সুস্থ ত্বকই হতে পারে নিয়মিত অভ্যাসের পুরস্কার।
