মেঘবরণ ঘন চুলের আশায় আমরা সবাই থাকি, কিন্তু অনিয়ম, হরমোনের তারতম্য কিংবা ভুল খাদ্যাভ্যাসে চুল পড়ে মাথায় ফাঁকা অংশ দেখা দেওয়াই আজ বাস্তব সমস্যা। আগে মনে করা হতো চল্লিশ পেরোলেই কেবল ছেলেদের টাক পড়া শুরু হয়, কিন্তু এখন বয়সের সীমা নেই—কমবয়সিরাও অ্যালোপেসিয়ায় ভুগছেন। শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদের মধ্যেও চুল পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষত প্রসবের পর হরমোনের ওঠানামা, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মানসিক চাপ এবং পুষ্টির ঘাটতি চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিচক্রকে ব্যাহত করে।
চুলের জীবনচক্র মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত—অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন ও টেলোজেন। প্রথম তিন বছরে চুল বেড়ে ওঠে, পরে স্বল্পস্থায়ী ক্যাটাজেন পর্যায় পার করে টেলোজেনের শেষে চুল ঝরে যায় এবং নতুন চুল ওঠার কথা। কিন্তু এই স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হলে নতুন চুল ওঠা কমে যায়, আর পুরোনো চুল ঝরতে থাকে বেশি—এটিকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় অ্যালোপেসিয়া। সবচেয়ে প্রচলিত রূপ অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা পুরুষসুলভ টাক পড়া, যেখানে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের ভূমিকা মুখ্য। চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে মাথাজুড়ে ফাঁকা অংশ বাড়তেই থাকে।
তবে আশার কথা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের খাবারে কিছু পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ উপাদান রাখলে চুল পড়া রোধ থেকে শুরু করে নতুন চুল গজানো পর্যন্ত নানা উপকার পাওয়া যায়।
অ্যালোপেসিয়া রোধে উপকারী ৫ খাবার
১. বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার
চুলের গঠনমূলক প্রোটিন কেরাটিন তৈরিতে বায়োটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিম, বাদাম, ওট্স, তিসি বা কুমড়োর বীজ, মিষ্টি আলু—এসব খাবার বায়োটিনে ভরপুর। শুধু বায়োটিনযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারে যতটা ফল মেলে, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে। এটি চুলকে শক্ত করে এবং চুল পড়া কমায়।
২. টম্যাটো
টম্যাটোতে রয়েছে লাইকোপিন, যা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট চুলের গোড়া মজবুত করে ও মাথার ত্বকের প্রদাহ কমায়। স্যালাড, স্যুপ বা রান্নায় নিয়মিত টম্যাটো রাখলে চুলের গুণগত মান বাড়ে।
৩. ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা–৩ শুধু হার্ট বা হাড়ের স্বাস্থ্যেই নয়, চুলের বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের প্রদাহ কমায়, রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি আখরোট, তিসির বীজ, চিয়া বীজ, সয়াবিন, পেঁপে ও কমলালেবুতেও প্রচুর ওমেগা–৩ রয়েছে।
৪. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে, চুলের ঘনত্ব বাড়ায় এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। নিয়মিত গ্রিন টি পানে চুল পড়ার হার কমে।
৫. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
আয়রনের ঘাটতি থাকলে চুল দ্রুত পড়ে। তাই ডাল বা বিন, কিশমিশ, অ্যাপ্রিকট, কাজু, কাঠবাদাম, পালং শাক ও নানা সবজি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরে আয়রন শোষণ সহজ করে। পাশাপাশি ডিম, চিকেন, ছানা বা পনিরেও আয়রন থাকে যা শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
শেষকথা
অ্যালোপেসিয়া সম্পূর্ণ সারানোর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও, সঠিক খাদ্যাভ্যাস চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রথম ধাপ। বায়োটিন, ওমেগা–৩, আয়রন, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসহ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে চুল পড়া কমে এবং নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনাও বাড়ে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে এই পাঁচটি খাবার অন্তর্ভুক্ত করলে চুলের ঘনত্ব ধরে রাখা সহজ হবে।

